আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকছেন ওবায়দুল কাদেরই
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে দলের প্রবীণ নেতাদের মনোযোগ নেই, উৎসাহও নেই। দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তরুণদের মধ্যে থাকলেও প্রবীণদের নেই। সব ঠিক থাকলে আসছে অক্টোবরেই হতে পারে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল।
এবারও দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। তবে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে কয়েকজন নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন। বিশেষ করে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা যাওয়ায় তার জায়গায় একজন নারী প্রেসিডিয়াম সদস্য অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে পরিবর্তন। সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে দুজন হতে পারেন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। তবে দলটির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন সামনে রেখে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বাদ পড়া কয়েকজন প্রবীণ নেতাকে এবার প্রেসিডিয়াম পদে ফের অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
এদিকে দলের কাউন্সিল সফল করতে তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠ গরমের কথা বলা হলেও দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটমাট করতেই বেগ পেতে হচ্ছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নবীন-প্রবীণ নেতাদের নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠিত। গত তিনটি জাতীয় কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে তরুণরা বেশি স্থান পাওয়ায় প্রবীণ নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে কে স্থান পেলো তা নিয়েও প্রবীণদের মধ্যে উৎসাহ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের কোন্দল নিরসন, মেয়াদোত্তীর্ণ বেশিরভাগ শাখায় কমিটি গঠন ও স্বচ্ছ কাউন্সিলর তালিকা তৈরিসহ বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক কাজ চলছে ঢিমেতালে। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভাবনামুক্ত হতে পারেনি। তবে সাংগঠনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে বিষয়টি মিটমাটের জন্য কাউন্সিলের আগেই দলের হাইকমান্ডের কাছে উপস্থাপন করা হবে। দলের হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনাতেই হবে চূড়ান্ড সিদ্ধান্ত।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমবারের মত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে থাকা ওবায়দুল কাদের।
তৃণমূলের সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ছিল। এতে সংগঠন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম আদর্শভিত্তিক দল। আদর্শ থেকে তারা কখনো বিচ্যুত হবে না।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলেও আস্তে আস্তে আমরা আবার এক করে ফেলার কাজ করছি। তৃনমূলেও ঐকবদ্ধ হচ্ছে। আর এই একতার জন্য আমাদের মূল শক্তি হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে দলের সর্বস্তরের নেতারা কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা বড় সঙ্কট নয়। যেখানে গণতন্ত্র আছে, রাজনীতির চর্চা আছে, সেখানে নেতার বিকাশ ঘটবেই। যার প্রতিফলন প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যাপকতা। কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ের তথ্য নিচ্ছেন। সব দুর্বলতা কাটিয়ে যথাসময়ে কাউন্সিল করা হবে।
দলের শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক কাজ করেন এমন কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা মনে করেন গত উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। নৌকা প্রতীককে হারিয়ে নির্বাচিত হয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করাসহ নানা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জাতীয় সন্মেলের আগে হচ্ছে না। দলের তৃণমূলের শতশত নেতাকে বহিস্কার করা একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে সম্ভব হবে না।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতীসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফেরার পর দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে সন্মেলন প্রস্তুতির জন্য গঠিত কমিটির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করতে পারেন।
এদিকে আগামী অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠন, গঠনতন্ত্র সংশোধন, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠন, সাংগঠনিক সফর, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধ নিরসন, উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণকরাসহ সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে রেখেছে দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়াও কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করার তাগাদাও দেয়া হয়েছে। এ জন্য বিশেষ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন দলটির সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে দলের জাতীয় কাউন্সিল যথাসময়ে হবে কিনা এ নিয়েও নেতাকর্মিদের মধ্যে নানা গুঞ্জন রয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে সন্মেলনের তারিখ ৬ মাস পেছানোও হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এবারো সন্মেলনের তারিখ ৩ থেকে ৬ মাস পিছিয়ে যেতে পারে।