মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যা পেয়েছি তাই প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ক্ষমা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে তারা আদালতে যেতে পারেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, একাত্তরে প্রস্তুত করা তালিকাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংযোজন করে থাকতে পারে।
রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম এটা ইতিহাস মানবে না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত তারাই করতে পারেন যারা ওইসময়ের। তাই আমি মনে করি, এটা প্রকাশ পেয়ে ভালো হয়েছে যাচাই বাছাই করার জন্য একটা সুযোগ রয়েছে। যদি এটা ৩০ বছর আগে প্রকাশ হতো তাহলে এটা সংশোধনের সুযোগ থাকত না বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, অভিযোগ আসছে তবে এটাকে বিতর্কিত বলা যাবে না, দেখতে হবে সংখ্যাটা কত। আমার জানা মতে, বরিশাল জেলারটা জানতে পেরেছি। যেটা ভুলভাবে এসেছে সেটা অবশ্যই শুদ্ধ করা হবে। যেহেতু ভুল এটা একটা শিক্ষা, এটা থেকে আমরা জানলাম, বুঝলাম তালিকার মধ্যেও ভুল থাকতে পারে। একাত্তর সালে ছিল, বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা করে নাই, সেটা সেই সময় করেছে। যেহেতু আমরা প্রকাশ করেছি তাই এর দায় অস্বীকার করতে পারি না। নিশ্চয় আমরা ভুলের দায় স্বীকার করবো এবং সেই ভুল সংশোধন করবো। আমাদের দৃষ্টিতে আসে বা লিখিতভাবে অভিযোগ কেউ করেন তাহলে যাচাইবাছাই করে আমাদের মতামতসহ প্রকাশ করবো।
এরআগে গতকাল সোমবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছিল আমরা শুধু সেটাই প্রকাশ করেছি। সেখানে কার নাম আছে, আর কার নাম নেই সেটা আমরা বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘একই নামে তো অনেক মানুষ থাকতে পারেন। আর একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসবে কেন, এটা হতে পারে না। আর যদি আসেও সেটা পাক বাহিনীর ভুল। যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, তবে আমরা সেটা যাচাই করে দেখব।
এদিকে, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ওই তালিকায় প্রকৃত রাজাকাদের নাম না আসায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে। তালিকায় নাম থাকা অন্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।
রাজাকারের প্রকাশিত তালিকার ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) থাকা এই পাঁচজনের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল।
অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আরিফ টিপুর বড় অবদান ছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।
এছাড়া অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও অ্যাডভোকেট মহসিন আলী তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন তাদের নামও যদি তালিকায় থাকে, সেটিও হবে চরম লজ্জাজনক। কেন তাদের নাম এ তালিকায় উঠে এলো, কোন প্রসঙ্গে এলো তা বিস্তারিত উল্লেখ নাই।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তীর বাবা ‘তপন কুমার চক্রবর্তী’র নাম নিয়ে অভিযোগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
মনীষা চক্রবর্তী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। সদ্য প্রকাশিত রাজাকারদের গেজেটে আমার বাবা এবং ঠাকুমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা এড. তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, ক্রমিক নং-১১২ পৃষ্ঠা-৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও পেয়ে থাকেন! আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার।’
‘আমার ঠাকুরদা এড. সুধির কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুমা উষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় ৪৫ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন- শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য আমার রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগ সরকারকে।
আমার দল বাসদ আমাকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করাকে। মিছিল থেকে গ্রেফতার করে থানায় নির্যাতন করে ওরা বলেছিল যে আন্দোলন যেন না করি, নির্বাচনে যেন অংশ না নিই। রাজী না হওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজামিনযোগ্য মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করেছে। আমরা জেল খেটেছি, নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি।