ফিকে হচ্ছে মোদি ম্যাজিক, দিল্লি ও বিহার নিয়েও চিন্তায় বিজেপি
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী গেরুয়াবাহিনী বিজেপি’র পতন বাড়ার পাশাপাশি মোদি ম্যাজিকও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। ঝাড়খণ্ডে পরাজিত হওয়ার পরে দলটির মধ্যে এবার আসন্ন দিল্লি ও বিহার বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
কার্যত গোটা ভারতে বিজেপি’র আধিপত্য কমছে। তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে একের পর এক রাজ্য। ২০১৭ সালে ভারতের ৭১ শতাংশ ছিল বিজেপি’র দখলে। দু’বছর পরে ঝাড়খণ্ড হাতছাড়া হতেই তা কমে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
লোকসভা ভোটে বিপুল জয়ের মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড সর্বত্র বিজেপি খারাপ ফল করছে। বিজেপি বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হলেই বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২০ সালে দিল্লি ও বিহারেও বিজেপিকে বড় ধাক্কা খেতে হবে এবং ২০২১ সালে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালার নির্বাচনেও তাঁদের একই অবস্থা হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ফলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ নয়, বরং অনেক রাজ্যই ‘বিজেপি মুক্ত’ হয়ে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
দেশে যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে প্রবল বিক্ষোভ চলছে, ঠিক তখনই ঝাড়খণ্ডের ফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগজনক! কারণ, দেখা যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল, চার মাসের মধ্যে অযোধ্যায় আকাশছোঁয়া রামমন্দির নির্মাণের জোরালো ঘোষণা, এনআরসি ইত্যাদি ইস্যুকে বিজেপি ভোটে জেতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সফল হচ্ছে না।
সাধারণ মানুষ বিজেপির প্রচার করা জাতীয়তাবাদের তুলনায় আর্থিক মন্দা ও বেকারত্বের ইস্যুকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেই প্রমাণ দিচ্ছে একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনের ফল। আর দেড় মাস পরেই দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। এরপরে বিহারে নির্বাচন হবে। ঝাড়খণ্ডের ফলাফলের পরে অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদি কী এনআরসি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে প্রচারে বিরতি দেবেন? না কি অনড় অবস্থানই বজায় রাখবেন, রাজনৈতিক মহলে এই প্রশ্নই দেখা দিয়েছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ঝাড়খণ্ডের জনতা প্রধানমন্ত্রীকে আরও যে বিপজ্জনক বার্তা দিয়েছেন তা হল, নির্বাচনে একা মোদি আর জয়ের কারিগর হতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক আজ (মঙ্গলবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, “বিজেপি ধর্মের নামে অধর্ম করছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্র তার জবাব দিয়েছে। ওদের পরাজিত করতে হলে সবাইকে একজোট হতে হবে। ভোট ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। ভোট ভাগ হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে!”
“দিল্লিতেও যদি বিজেপিকে হারাতে হয় তাহলে আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসকে একজোট হতে হবে। ওরা টিকে আছে কেবল ভোট ভাগের উপরে। ওরা আগের বারে ভোট পেয়েছিল ৩১ শতাংশ। এবার ৩৮ শতাংশ ভোট নিয়ে তাঁরা ক্ষমতায় এসেছে। বিজেপির চলে যাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আমি তা বহুদিন ধরে বলে আসছি। ভারতের মানুষ ওদের যথাযথ জবাব দেবে। ভারতের ৭১ শতাংশ জায়গা ওরা দখল করে রেখেছিলেন। সেখান থেকে আজকে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে! এনআরসির নামে ভারতের মধ্যে বিভেদের রাজনীতি চলছে। ওরা মুখে বিবেকানন্দের কথা বলে, আসলে ওরা হচ্ছে বিভেদানন্দ। বিভেদ সৃষ্টি করছেন।”
“সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ/ক্যা)-এর নামে যে অমানবিক আইন এনেছেন তাতে উদ্বাস্তু-শরণার্থীরা সর্বনাশের মুখে পড়বেন! কারণ ‘শরণার্থীরা’ যদি কেউ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন তিনি ‘জালিয়াত’ বলে প্রমাণ হবেন। সুতরাং নির্বাচনের রায় বিজেপির জালিয়াতি, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, দম্ভ এবং রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে রায়। সংক্ষেপে বলা যায় ঝাড়খণ্ডে এখন ঝাড়।”