অনিয়ম করলে বিমানে চড়া বন্ধ, মন্ত্রী-এমপিদের শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে-ই দুর্নীতি করবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমি দুর্নীতি বরদাশত করব না। এ দেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গি, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করব।’
আজ শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি। বাংলাদেশ যে উন্নত হতে পারে তা আমরা প্রমাণ করেছি। এই বিমানবন্দর একটা সাদামাটা বিমানবন্দর ছিল।
১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে তার পরিবর্তন করেছি। আমরা অন্যান্য পদক্ষেপও নিয়েছিলাম। আমরা চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করেছিলাম। বরিশাল, সৈয়দপুর ও রাজশাহী বিমানবন্দরকে উন্মুক্ত করেছি।’
পর্যটন জেলা কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করব। সে কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশকে এভাবেই আমরা এগিয়ে নিচ্ছি।
আমরা কার্গো বিমান ক্রয় করব। অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই হেলিকপ্টারকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিয়েছি। প্রত্যেক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা উন্নত করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। যাদের অর্থ দিয়ে আমাদের বৈদেশিক রির্জাভ হয় সেই প্রবাসীরা যেন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
এ সময় তিনি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। স্বর্ণের চোরাচালান বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমান ও বন্দর ব্যবহারে যাত্রী সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৩য় টার্মিনাল হয়ে গেলে আরও বেশি যাত্রী যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। আমরা অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছি তারই একটি সূচক হলো এ টার্মিনাল।
দারিদ্রতাকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আগামী বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও পরের বছর স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর আগে আমরা চাই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে।’
এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ও রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নতুন বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ‘অচিন পাখি’ ও ‘সোনার তরী’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে তিনি উড়োজাহাজে আরোহণ করেন এবং ককপিটসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ২১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে পাওয়া যাবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, জাপানের মিটসুবিশি এবং ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং একটি কনসোর্টিয়ামের অধিন একটি কনসোর্টিয়াম এই নির্মাণ কাজটি করবে।
নতুন আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালটি হবে ২২ দশমিক ৫ লাখ বর্গফুট। বর্তমানে দুটি টার্মিনালে ১০ লাখ বর্গফুট স্পেস রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের বর্তমান যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বেড়ে ২ কোটি হবে এবং কার্গোর ধারণ ক্ষমতা বর্তমান দুই লাখ টন থেকে বেড়ে পাঁচ লাখ টন হবে।
এর আগে বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।
উড়োজাহাজ দুটি দিয়ে ম্যানচেস্টারের পাশাপাশি লন্ডনের হিথ্রো রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার রুটের উদ্বোধনী ফ্লাইটের প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
এছাড়া লন্ডনে আগে থেকেই আমাদের ফ্লাইট নিয়মিত যাওয়া-আসা করছে। ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম শহর ম্যানচেস্টারে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশির কথা চিন্তা করে ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই রুটে ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজে বিজনেস ক্লাস ৩০টি, প্রিমিয়াম ইকোনমি শ্রেণি ২১টি ও ইকোনমি শ্রেণি ২৪৭টিসহ মোট ২৯৮টি আসন রয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে ‘সোনার তরী’ এবং গত ২৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ২০ মিনিটে অবতরণ করে ‘অচিন পাখি’।
উড়োজাহাজ দুটিকে ওয়াটার স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। এ দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮টি।