রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর রাজশাহী। আম ও রেশমি বস্ত্রের জন্যে বিখ্যাত জেলাটি রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় শহর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমৃদ্ধ এই রাজশাহী শহরে রয়েছে বিখ্যাত মসজিদ, মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। পদ্মার তীরের এই শহরে পর্যটকদের দর্শনের মতো অনেক স্থান রয়েছে।
সাফিনা পার্ক:
রাজশাহী জেলাধীন গোদাগাড়ী উপজেলায় অবস্থিত সাফিনা পার্কের যাত্রা শুরু। ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের দিগরাম খেঁজুরতলায় ৪০ বিঘা জমির উপর সাফিনা পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের ভেতরে দুইটি লেকে দর্শনার্থীদের পানিতে চলাচলের জন্য নৌকা রয়েছে। পার্কের সমস্ত এলাকা জুড়ে ফুলের বাগানের সঙ্গে রয়েছে কৃত্রিম উপায়ে তৈরিকৃত বিভিন্ন জীবজন্তু।
বরেন্দ্র জাদুঘর:
পদ্মা নদীর পাশেই বরেন্দ্র জাদুঘর অবস্থিত। চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, বাগান এবং নির্জন প্রকৃতির সৌন্দর্য আপনার মনকে ছুঁয়ে যাবে। এখানে আছে কৃত্রিম লেক ও পাহাড়। জাদুঘরের পাশেই আছে হযরত শাহ মখদুম (রা)এর মাজার। তিনি ছিলেন ইয়েমেন-এর শাসক। তিনি এখানে এসে সমাজের অনেক কুসংস্কার দূর করেন, শিক্ষা দেন, ইসলামের প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেন।
পুঠিয়া প্যালেস:
রাজশাহী অঞ্চলের আর একটি ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান হচ্ছে পুঠিয়া প্রাসাদ। এই স্মৃতি স্তম্ভটির আরেকটি নাম হচ্ছে গোবিন্দ মন্দির। এখানের ভবন গুলোর উভয় পাশেই দীঘি আছে। বর্তমানে প্রধান ভবনে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিখ্যাত সাধক শাহ দেউলা এবং আরো অনেক সুফি সাধকের কবর আছে এখানে।
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা:
ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা আমাদের দেশে ঘোড়দৌড় বা রেস খেলার প্রচলন করে। খেলা দেখা ও বাজি ধরায় প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি হত। শহরাঞ্চলেই ঘোড়দৌড় মাঠ বা রেসকোর্স ছিল। রেসের নেশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন। অনেকে এ খেলায় সর্বস্বান্ত হয়েছে। কার্যত আয়োজকরাই লাভবান হয়েছে। রাজশাহী শহরের রেসকোর্স ছিল পদ্মার পাড়ে। এখন এই রেসকোর্স ময়দান রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা।
হাওয়াখানা:
ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের তারাপুর মোড় হতে ১ কিমি দক্ষিণে তারাপুর গ্রামে হাওয়াখানা অবস্থিত।হাওয়াখানার চারপাশে দিঘী। এটি একটি সুন্দর তেতলা ভবন। ১ম তলা পানির মধ্যে। ২য় ও ৩য় তলা পানির উপরে। পুঠিয়ার রাজাগণ গ্রীষ্মকালে হাওয়খানায় শরীর ও মন ঠাণ্ডা করতেন।
গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়ি:
ঐতিহ্যবাহী গোয়ালকান্দি জমিদারবাড়ির জমিদার ছিলেন জমিদার কংস নারায়ন। আনুমানিক ১৯৪৭ সালের দিকে এদেশের জমি-জমা বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বিনিময় করে ভারত চলে গেছেন। অনেক পর্যটক আসেন এই জমিদার বাড়ি দেখতে।
সরমংলা ইকোপার্ক:
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় অবস্থিত সরমংলা ইকো পার্কটি ২০০৩ সালের দিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে উপজেলার নিত্যনন্দপুর থেকে হরিশংকরপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার খাঁড়ি খনন করার পর খাঁড়ির দুই পাড়ে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হয়।
পুঠিয়া মন্দির:
রাজশাহী শহর থেকে ০৮ হতে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং উত্তর পশ্চিমে দেওপাড়া, কুমারপুর ও বিজয়নগরে এর অবস্থান।
রাজশাহীর যে স্থানটি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করবে সেটি নিঃসন্দেহে পুঠিয়া। রাজা পিতাম্বর মূলত পুঠিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ষষ্ঠাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পুঠিয়ায় রাজধানী স্থাপন করেন। একাধিক সুদৃশ্য ইমারত নির্মাণসহ জলাশয় খনন করেন। রাণী ভূবনময়ী বিশাল একটি জলাশয়ের সম্মুখে ভুবনেশ্বর শিবমন্দির নির্মাণ করেন (১৮২৩-১৮৩০)। এটি পঞ্চরত্ন শিবমন্দির নামেও খ্যাত। বাংলাদেশে বিশালাকারের সুউচ্চ ও বহু গুচ্ছচূড়া বিশিষ্ট শিবমন্দিরগুলোর মধ্যে পুঠিয়ার পঞ্চরত্ন শিবমন্দিরটি স্থাপত্যশৈলীতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবী রাখে।