বৈশ্বিক-মহামারীতে রূপ নেওয়ার আগে কি করোনা’র টিকা আবিষ্কার হবে?
করোনাভাইরাসের চলমান মহামারী বৈশ্বিক-মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে বলে দুনিয়ার শীর্ষস্থানীয় সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা আশংকা ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি এ রোগের টিকা বের করার তৎপরতাও চলছে জোরেশোরে।
কোনও চলমান মহামারী দুই বা তারচেয়ে বেশি মহাদেশে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়লে তাকে প্যান্ডেমিক বা বৈশ্বিক-মহামারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী রূপটি সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে কিছু এখনও জানতে পারেন নি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এটি বৈশ্বিক-মহামারীর আকার ধারণ করলে তাতে ক্ষতির পরিমাণ কি দাঁড়াবে তাও এ পর্যন্ত সঠিক ভাবে আঁচ করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি এ কারণে। অবশ্য, একটি বিষয়ে ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে যে অভূতপূর্ব বা নোভেল হিসেবে ঘোষিত করোনাভাইরাস ২০১৯-এনসিওভি এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে সংক্রমণের উচ্চ ক্ষমতা রাখে।
এ উহানের করোনাভাইরাসের বিস্তারের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জার বেশ মিল রয়েছে। অর্থাৎ এটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেশ শক্তিশালী। বা উঁচু পর্যায়ের। সে তুলনায় সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স এবং মিডিল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার গতি অনেক কম বলেই বিজ্ঞানীদের কাছে ধরা পড়েছে।
সব মিলিয়ে মার্কিন অ্যালার্জি এবং সংক্রমণ ব্যাধি সংক্রান্ত জাতীয় ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি আশংকা ব্যক্ত করে বলেন, সংক্রমণ ক্ষমতার বিচারে এটি খুবই শক্তিশালী এবং প্রায় নিশ্চিত ভাবেই এটি বৈশ্বিক-মহামারীর আকার ধারণ করবে। পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেন, এটি বৈশ্বিক-মহামারীর রূপ নিলে তাতে মহা-বিপর্যয় ডেকে আনবে কিনা তা আমার জানা নেই।
সংক্রমণ রোগের বিষয় নিয়ে তৈরি চিকিৎসা-বিজ্ঞানীদের নানা মডেল থেকে মনে করা হচ্ছে ২০১৯-এনসিওভি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা এক লাখ বা তারচেয়ে বেশি। প্রকোপ শুরু হওয়ার পরপরই এত বেশি সংখ্যক মানুষ মার্স বা সার্সে আক্রান্ত হয় নি। ২০০৩ সালে প্রকোপ দেখা দেয়ার পর নয় মাসে মাত্র ৮০৯৮ ব্যক্তি সার্সে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এ পর্যন্ত মাত্র ২৫০০ ব্যক্তি মার্সে আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কি দাঁড়াবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সার্সে আক্রান্তদের ১০ শতাংশ প্রাণ হারিয়েছেন। আর মার্সের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি তিন জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
অন্যদিকে, মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টিকারী এইচ১এন১ বা সোয়াইন ফ্লুতে মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৮৫ হাজার। এ রোগ ২০০৯ সাল থেকে দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর মৌসুমি ফ্লুতে এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। সোয়াইন ফ্লুতে মৃতের হার ০.০২ শতাংশ, মানে প্রতি ১০ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ২ জন।
কিন্তু উহান করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ২ শতাংশ অর্থাৎ আক্রান্ত প্রতি একশ জনের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু ঘটে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে সব রোগী শনাক্ত করা গেছে তার ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু এ মৃত্যুর এ হার কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হালকা ভাবে আক্রান্ত আর রোগী সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাণঘাতী ক্ষমতা জানতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু গবেষণা সমীক্ষা চালাতে হবে। তার আগে এ বিষয়ে সঠিক তথ্যও পাওয়া হয়ত যাবে না।
আসছে টিকা
জাপানের সংক্রমণ ব্যাধি সংক্রান্ত জাতীয় ইন্সটিটিউট বলেছে, তারা উহান করোনাভাইরাসকে জন্মাতে এবং তাকে পৃথক করতে পেরেছে। এ ভাইরাসকে পৃথক করার মধ্য দিয়ে এ ইন্সটিটিউট এবারে টিকা তৈরি করতে পারবে। পারবে এ ভাইরাসের চিকিৎসার ওষুধ তৈরি করতে।
এর আগে, ২০১৯- এনসিওভি করোনাভাইরাসের টিকা তিন মাসের মধ্যেই বের হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। এ ভাইরাসের জেনেটিক সিকুয়েন্স সংক্রান্ত তথ্য চীনা বিজ্ঞানীরা অনলাইনে দেয়ার পরই টিকা তৈরির কাজ শুরু হয়।
ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যাল ইনকর্পোরেটেড এবং মোডেরনা ইনকর্পোরেটেড নামে দু’টো কোম্পানি বলেছে প্রাণী দেহের পরীক্ষার উপযোগী টিকা এক মাসের মধ্যেই বের হবে। আর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য তিন মাসের মধ্যেই টিকা প্রস্তুত হবে। এ কথা বলেছে মোডেরনা। মার্কিন অ্যালার্জি এবং সংক্রমণ ব্যাধি সংক্রান্ত জাতীয় ইন্সটিটিউটের সঙ্গে টিকা নিয়ে একযোগে কাজ করছে মোডেরনা।