ভালোবাসার দিনে বেদনায় নীল কাপ্তাই হ্রদ
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সড়কে, মধ্য দুপুরে কাপ্তাই হ্রদে ও কর্ণফুলী নদীতে ঝড়ে গেল ৭টি তাজা প্রাণ। এ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরাদের বর্ণনা মতে চালকে অসতর্কতার কারণেই ঘটেছে এসব দুর্ঘটনা।
রাঙামাটি শহরের অদূরে সাপছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বাসের হেলপার, আহত হন ২৭ যাত্রী। তারা চট্টগ্রাম থেকে পিকনিকে আসছিল রাঙামাটিতে, শেষ পর্যন্ত আর আসা হয়নি পিকনিকে। আহত হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে চট্টগ্রাম।
আহত শ্রমিক রমিজ উদ্দিন বলেন, ভাগ্য বিধাতা যে আমাদের সঙ্গ নেই। সারা বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করি। আজ এসেছিলাম একটু আনন্দ করতে কিন্তু সেটা আর হলো না। ফিরে যাচ্ছি আহত হয়ে। এ দিনটি জীবনে ভুলতে পারব না।
শাহাদত নামের অপরজন জানান, ঢালু সড়কে বাঁক ঘুরতে গিয়ে চালক গাড়ির গতি না কমানোয় বাসটি উল্টে যায়।
অপরদিকে প্যাসেপিক জিন্সের একদল কর্মী পিকনিকে এসে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলে ভেসে বেড়াতে পর্যটন ঘাট থেকে বোট যোগে যাত্রা করেছিল সুবলং ঝর্ণার পথে।
পথিমধ্যে চালকের অবহেলার কারণে বোটটি উল্টে যায়, ফলে প্রাণ হারায় চার নারী ও এক শিশু।
ডুবে যাওয়া বোটের পাশের বোটে থাকা সুমন জানান, আমরা দুটি বোটে সুবলং যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করি, তবে যাত্রা শুরুর আগেই যাত্রী ওঠা নিয়ে দুই বোট চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই দুই চালক গতির প্রতিযোগিতায় নামে। ডিসির বাংলোর কাছে যেতেই বোট দুটিতে ধাক্কা লাগার উপক্রম হলে বাম পাশের বোটটি দ্রুত বাঁক নিতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
শরিফ জানান, অপর বোট থেকে ঝাঁপ দিয়ে আমরা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করি, বাকিরা নিচে আটকা পড়ে, সাহায্যের জন্য অনেক চিৎকার করি কিন্তু আশপাশে অনেক বোট থাকার পরও কেউ এগিয়ে আসেনি।
বেঁচে যাওয়া শিশু ছানাউল্লাহর মাকে বাঁচানোর চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে পুরো ডিসির বাংলো এলাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তার মাকে।
অপরদিকে লিপি বেগম তার দুই সন্তানকে দুহাতে উঁচু করে বাঁচাতে পারলেও নিজে মারাত্মক আহত হয়। রাঙামাটি হাসপাতালে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।
অন্যদিকে কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বোট ডুবিতে নিখোঁজ তিন জনের মধ্যে এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো নিখোঁজ ২ জন। সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। শনিবার সকাল থেকে আবারও উদ্ধারে নামে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দল।
ফাগুন আর ভালোবাসার দিনে এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। সুবিশাল হৃদেরনীল জলের মতোই ভালোবাসার এ দিনে যেন বেদনায় নীল হয়ে আছে রাঙামাটির আকাশ।