৭০% শ্রমিক করোনা আতঙ্কে ছুটিতে, কাল বসছে আরও একটি স্প্যান
করোনাভাইরাস–আতঙ্কের মধ্যেও পদ্মা সেতুর আরেকটি স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) উঠছে কাল শনিবার। ইতিমধ্যে নির্মাণ মাঠ থেকে নতুন স্প্যানটি মাঝনদীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাল সকাল থেকে ওঠানো শুরু হবে। এটি বসলে সেতুতে স্প্যান হবে ২৭টি। দৃশ্যমান হবে সেতুর ৪ হাজার ৫০ মিটার। কালকের স্প্যানটি বসবে ২৭ ও ২৮ নম্বর পিয়ারের ওপর।
নতুন আরেকটি স্প্যান বসানোর কথা নিশ্চিত করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের। তিনি বলেন, আগামী মাসের মাঝামাঝিতে আরও দুটি স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে। এর আগে মূল সেতুর ২৬টি স্প্যান বসেছে। অর্থাৎ সেতুর প্রায় চার কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। কাল আরেকটি বসানো হলে ২৭টি হবে। মোট ৪১টি স্প্যান জোড়া দেওয়া সম্পন্ন হলে পদ্মা সেতু পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে।
তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস–আতঙ্কের কারণে দেশীয় শ্রমিকদের ৭০ শতাংশই ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু স্থানীয় প্রকৌশলী রয়েছেন। ফলে নির্মাণ মাঠে নতুন করে স্প্যান জোড়া লাগানোর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ৩০ শতাংশ দেশীয় কর্মী আগে জোড়া লাগানো স্প্যানে রং করার কাজ করছেন। তাঁরা নির্মাণ মাঠে তৈরি শেডেই রাত্রিযাপন করেন। এর বাইরে বের হন না। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগে মূল সেতুর কাজে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশি কাজ করছিলেন। মূল সেতুর কাজে পৌনে ৭০০ চীনা নাগরিক কাজ করতেন। এর মধ্যে শ খানেক চীনা ফিরতে পারেননি; যাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিক। প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের প্রায় সবাই এখন বাংলাদেশে আছেন। তাঁদের এখন দেশে ফেরত না যেতে বলা হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে বসানোর জন্য পাঁচটি স্প্যান প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে দুটিতে রং করার কাজ চলছে। তবে দেশীয় শ্রমিক না এলে কাজ খুব একটা এগোবে না। এ ছাড়া দুটি স্প্যান চীন থেকে দেশে আসেনি। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর তা আটকে যায়। আগামী মাসের শেষের দিকে দুটি স্প্যান চীন থেকে জাহাজে তোলা হতে পারে।
এ ছাড়া ১০০–এর বেশি পরামর্শক-বিশেষজ্ঞ পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছেন। এর বেশির ভাগই বিদেশি নাগরিক। তাঁদের কয়েকজন ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে আর কাজ করবেন না বলে জানিয়ে দেশ ছেড়েছেন। আরও কিছু বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশ ছাড়ার তাগিদ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ নিশ্চিতভাবেই পেছাবে বলে মনে করছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে কত দিন পেছাতে পারে, সেটা এখনো নিরূপণ করা হয়নি।
গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের মোট অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৮৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে, আগামী বছরের জুনে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। এ জন্য স্টিলের কাঠামোর ওপরে কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭০০ মিটার স্ল্যাব বসানো হয়েছে। স্ল্যাব বসানোর পর পিচ ঢালাইসহ চূড়ান্ত কাজ করা হবে। স্টিলের কাঠামোর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। সে জন্য রেললাইন বসানোর কাজ চলমান আছে।