কলাপাতার ঘরেই টাঙ্গাইলের মনসুর আলীর জীবন সংসার
অন্তু দাস হৃদয়, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
কবি জসীমউদ্দীনের আসমানীর বাড়ি ছিল ফরিদপুরের রসুলপুরে। তার ঘর ছিল ভেন্নাপাতার ছাউনির। সেই আসমানীর ঘরের মতো টাঙ্গাইলের রসুলপুরে পাওয়া গেল কলাপাতার ছাউনি দেওয়া ঘর। এটি মুনসুর আলীর। আসমানীর বাড়ি ভিটে থাকলেও বৃদ্ধ মুনসুরের তাও নেই।
সরকারি খাস জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে তার বাস। কালবৈশাখী ঝড় শুরু হলে স্ত্রীকে নিয়ে ঝুপড়ি ঘর আঁকড়ে ধরে থাকেন। বৃষ্টির পানি কলাপাতা চুয়ে পড়ার আগেই তাদের গা ভিজে যায়। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের সরাবাড়ি গ্রামের মুনসুর আলী পেশায় দিনমজুর। পাঁচ মেয়ে আর দুই ছেলে সন্তানের জনক তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন আর ছেলেরাও বিবাহিত।
দিনমজুর ছেলেরাও ব্যস্ত তাদের সংসার নিয়ে। সন্তানরা কেউ খোঁজ নেয় না বৃদ্ধ বাবা-মায়ের। মুনসুর বলেন, কেউ খোঁজ নেয় না! না সন্তানরা, না মেম্বার-চেয়ারম্যান। অনেকবার একটা ঘরের কথা সবাইকে বলেছি, কেউ দেয় না। ছেলে মেয়েদের সংসারই চলে না, আমাগো কিবা কইরা দেখবো। তিনি বলেন, কি জানি রোগ আইছে দেশে, কাম বন্ধ, ঘরেও খাবার নাই। আট-নয়দিন আগে কয়ডা চাইল আর ডাইল পাইছিলাম, তাও ফুরাইয়া গেছে।
জানা গেছে, সরকারি ত্রাণ এখনো জোটেনি তার ভাগ্যে। যে চাল ডাল পেয়ে ছিলেন, তা ছিল সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার ব্যক্তিগত সাহায্য। স্থানীয় ইউপি মেম্বার নূরুল ইসলাম বলেন, মুনসুর আলীর ঘরের বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম, হয়নি। পরে যাদের ঘর এবং ভূমি নেই, তাদের তালিকায় ওনার নাম দিয়ে ভূমি অফিস থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছি। এ বিষয়ে রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক সরকার বলেন, ঘরের বিষয়টি স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও দেখে থাকেন।
আমাদের কাছে ঘরের কোনো বরাদ্দ আসে না। ত্রাণের বিষয়ে তিনি জানান, ইউনিয়নে সরকারি ত্রাণ পেয়েছি মাত্র তিনশত প্যাকেট, তারপরও ব্যক্তিগত ভাবে ত্রাণ দিয়েছি। তিনি না পেয়ে থাকলে পরবর্তীতে পাবেন। এ প্রসঙ্গে ঘাটাইল-৩ আসনের সাংসদ আতাউর রহমান খান জানান, ঘরের কোন প্রকল্প আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর এ উপজেলায় কেউ না খেয়ে থাকবে না, অসহায় দরিদ্র যারা আছেন, সবার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।