শ্রীপুরে একই পরিবারের চার জনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় মামলা
গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে মা ও তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় শুক্রবার মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। নিহত স্মৃতি ফাতেমার শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন। গৃহকর্তা রেজোয়ান হোসেন কাজল কর্ম সুত্রে মালয়েশিয়া প্রবাসী। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনা বাজার আব্দুল আউয়াল ডিগ্রী কলেজ রোড (আবদার) এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের দ্বিতল বাড়ির দোতলার একটি কক্ষ থেকে তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীর জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনের মরদেহ খাটের ওপর ও বাকিদের মরদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। এসময় ঘর থেকে ছোরা ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, নিহতের পরিবার ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। গত প্রায় ২০ বছর আগে ইন্দোনেশিয়া প্রবাসযাপনকালে রেজোয়ান হোসেন কাজল ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমাকে বিয়ে করে। দেশে ফিরে পাশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার আবদার গ্রামে তার ছোট ভাই জাহিদ হাসান আরিফকে সাথে নিয়ে সাড়ে ৫ শতক জমি ক্রয় করে। সেখানে রেজোয়ান হোসেন কাজল দ্বিতল বাড়ি ও তার ভাই জাহিদ হাসান আরিফ আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে পাশাপাশি বসবাস করতেন। এদিকে, রেজোয়ান হোসেন কাজলের পরিবারে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। পরে চাকুরীর উদ্দেশ্যে রেজোয়ান হোসেন কাজল আবার মালয়েশিয়া চলে যান।
বিবরনে আরো জানা গেছে, ঘটনার আগের দিন ২২ এপ্রিল বুধবার নিহত স্মৃতি ফাতেমা তার দেবর জাহিদ হাসান আরিফকে বৃহষ্পতিবার সকালে বাজার করে দেয়ার কথা বলেন। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাসায় বাজার নিয়ে গিয়ে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দেবর আরিফ ফিরে আসেন। পরে একইদিন দুপুর তিনটার দিকে দেবর জাহিদ হাসান আরিফ ডাকাডাকি করলেও সাড়া মেলেনি। সাড়া না পেয়ে আরিফ তার ছেলে নাবিলকে (১০) তার টিনশেড ঘরের চালের ওপর দিয়ে ভেতরে যেতে বললে জানালা দিয়ে বাড়ির লোকদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে বাড়ির নিচতলার পেছনের দরজা খোলা পেয়ে বাড়ির দোতলার ঘরে গিয়ে ভাবী স্মৃতি ফাতেমা, দুই ভাতিজি সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), হাউরিন হাওয়া (১২) ও প্রতিবন্ধি ভাতিজা ফাদিল (৮) জবাই করে হত্যার আলামত দেখতে পান। এসময় ঘরের লাগেজ এবং কিছু আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় ছিল। আরিফ এ ঘটনা তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আশপাশের লোকজনকে অবহিত করেন। ইউপি সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু হত্যার ঘটনাটি শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহত স্মৃতি ফাতেমার শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের অভিযুক্ত করে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাতান্ডটির ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টীম তৎপর রয়েছে।