লাকসামে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যু
আরিফুর রহমান স্বপন, লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার লাকসামে করোনায় প্রথম এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মৃত ওই ব্যক্তির নাম মোঃ হেদায়েত উল্লাহ (৫৫)। তিনি পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের রাজঘাট এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার মুদাফরগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্রীয়াাংয়ে।
গতকাল ২৮ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসারে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ওইদিন গভীর রাতে তাঁর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দ্রুত মৃতদেহ দাফন করা হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,কে,এম সাইফুল আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল আলী, লাকসাম থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ নিজাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হেদায়েত উল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকার কিছু সংখ্যক লোক রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে করোনা রোগী দাপনে বাধা সৃষ্টি করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পিছু হটতে বাধ্য হন বাধা সৃষ্টিকারিরা।
এদিকে চরমোনাই পীরের গঠিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা টিমের সদস্যরা ধর্মীয় নীতি অনুযায়ী ওই মৃত ব্যক্তির গোসল ও জানাযার ব্যবস্থা করেন। দলের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য আলহাজ্ব সেলিম মাহমুদের সহযোগিতায় মৃত ব্যক্তির জানাযার ইমামতি করেন ইসলামী যুব আন্দোলন কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের অন্যতম সদস্য মুফতি ইমরান হোসেন এবং ওই কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের দায়িত্বশীল ডাঃ আবদুল মমিন মজুমদার, ওয়ালিউল্লাহ মুজাহিদ, আবদুর রাজ্জাক।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূ্ত্রে আরও জানা গেছে, গত ৭ই মে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পৌর শহরের রাজঘাটের বাসায় আসেন। এখানে আসার পর তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে অবাধে পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শে যান এবং রাজঘাট এলাকার দোকান-পাটে এবং শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে অবাধে বিচরণ করেন। এদিকে সংবাদ পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গত ১৪মে ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হলে পরদিন রাতে পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। পরে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং ওই বাড়িটিসহ পুরো এলাকা লকডাউন (অবরুদ্ধ) করে দেন।
অপরদিকে গত ১৬ মে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির পরিবারের অপর পাঁচ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে তাদেরও সকলের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ফলে ওই পরিবারের মোট ৬ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির মেয়ের জামাই। তার বাড়ি পশ্চিমগাঁও সোয়াছোয়ানী এলাকায়। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনিও তাদের সংস্পর্শে এসে করোনায় সংক্রামিত হন।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় এই প্রথম একজন মারা গেলেন।
তিনি করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসা-বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেন।