বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে দুই কৌশল ইউজিসির
করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় লম্বা সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর এ জট নিরসনে দুটি কৌশলের কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর একটি হলো- চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা ব্যাচ ধরে নিয়ে পরের সেমিস্টারে তুলে রাখা। আরেকটি অনলাইনে পরের সেমিস্টারের শ্রেণি-কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, বিষয়টি এখনো ভাবনা-চিন্তার মধ্যেই আছে। আগামী ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সঙ্গে একটি বৈঠক ডেকেছে ইউজিসি। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, সেশনজটের অভিজ্ঞতা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। কী করে মোকাবিলা করতে হবে তা সংশ্লিষ্টরা ভালো জানেন। আমাদের সঙ্গে শুধু অবহিত আর সম্মতির সম্পর্ক। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, ডিনস কমিটি ও সিন্ডিকেট। আমাদের চিন্তা ভিসিদের বলব।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। সবশেষ গত সোমবার এক ঘোষণায় আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এরপর আর যদি ছুটি নাও বাড়ানো হয় তবু ৯ মাস থেকে ১ বছরের সেশনজট তৈরি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় দুয়েক মাস বন্ধ রাখা এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেশনজট মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আছে। এমন ক্ষেত্রে সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে ও অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হতো। এভাবে সাধারণ সেশনজট নিরসন হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেশনজট অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে বিদ্যমান সেমিস্টার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্টোবর-নভেম্বরে নতুন সেমিস্টার শুরু করা যাবে।
তবে বিকল্প প্রস্তাব আছে। সেমিস্টার বা সেশনে নির্ধারিত সিলেবাস শেষ না হলে যতটা পড়ানো হয় তার ওপর পরীক্ষা নেয়ার দৃষ্টান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। সেই হিসাবে মার্চ পর্যন্ত কোর্সের যা পড়ানো হয়েছে তার ওপর পরীক্ষা নেয়া যায়।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, চলতি সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের ব্যাচভিত্তিক পরীক্ষা নেয়া যায়। যেমন: প্রথম বর্ষের সব শিক্ষার্থীকে এনে পরীক্ষা নেয়া হবে। এক কক্ষে সর্বোচ্চ দু’জন থাকবে। তাদের বিদায় দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হবে। একই প্রক্রিয়ায় তারা পরীক্ষা দেবে। এভাবে আলাদাভাবে মাস্টার্স পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া যায়। শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই আনানেয়া করা হবে।তিনি বলেন, ক্লাসের ব্যাপারে আমরা অনলাইন সমীক্ষা চালিয়েছি। যদি ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে এ ব্যাপারে চিন্তা করা যেতে পারে। তবে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের যেহেতু সামর্থ্য নেই তাই এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সাধারণ ছুটি শুরুর পর কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিলেও স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে। এর পেছনে নানা কারণের অন্যতম শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তি সামগ্রীর ঘাটতি। বিষয়টি এক সমীক্ষায়ও উঠে এসেছে।
অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, সমীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। ৫৫ শতাংশের ল্যাপটপ আছে। অপরদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধনী-গরিব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। তাদের অনেকেরই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ ও সামর্থ্য নেই। যেটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা কম। এ বিষয়টাও বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।