সেরার মুকুট হারানোর শঙ্কায় বার্সেলোনা
সেভিয়ার বিপক্ষে ড্র করে পয়েন্ট হারানোর পর এবার তুলনামূলক দুর্বল দল সেল্টা ভিগোর কাছে হোঁচট খেল বার্সেলোনা। শনিবার (২৭ জুন) সেল্টার মাঠে ২-২ গোলের সমতা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মেসি-সুয়ারেজরা।
করোনা পরবর্তী লা লিগায় সেভিয়ার সাথে ড্র করায় পয়েন্ট হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে নিচে নেমে গিয়েছিল বার্সেলোনা। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও রিয়ালের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে হারের কারণে পিছিয়ে যায় বার্সা। তারপর শিরোপার লড়াইয়ে ঠিকে ছিল তারা। এবার সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে আবারও পয়েন্ট হারালো বার্সেলোনা।
সেল্টার মাঠে সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ায় শিরোপার পথ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল রিয়ালের। শেষ সাত ম্যাচে রিয়াল জিতলে সমীকরণ ছাড়াই পয়েন্ট ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হবে তারা।
চার জনের দেয়াল ছিল ইয়াগো আসপাসের সামনে। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ফ্রি কিক পেয়েছিলেন তিনি। মানব দেয়ালের ওপর দিয়ে বল না মেরে আসপাস বল মারলেন নিচু শট। ৮৮ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে বল জালে জড়িয়ে জোড়া গোল করা লুইস সুয়ারেজকেও দিলেন ম্লান করে। দুই মিনিট বাকি থাকতে গোল খেয়ে বড় সর্বনাশই হয়েছে বার্সার।
ম্যাচের শেষ ৫ মিনিটে গোল খেয়ে লা লিগায় এই নিয়ে সবমিলিয়ে ৫ পয়েন্ট হারালো বার্সা। এই মৌসুমে লা লিগায় শেষদিকের গোলে পয়েন্ট হারানোর হিসেবে যা সর্বোচ্চ। এই একটি পরিসংখ্যান স্পষ্ট করেই বলছে চ্যাম্পিয়ন দলের চরিত্র এমন নয়! যদিও এখনও শীর্ষেই আছে বার্সা। ৩২ ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার পয়েন্ট এখন ৬৯। তবে রিয়াল মাদ্রিদ পয়েন্ট টেবিলের ২০তম দল এস্পানিওলের বিপক্ষে আগামীকাল জিতে গেলে শীর্ষস্থানে এগিয়ে যাবে ২ পয়েন্টে। লা লিগায় তখন বাকি থাকবে আর ৬ ম্যাচ। সেল্টার বিপক্ষে পয়েন্ট হারিয়ে তাই শিরোপা হারানোর শঙ্কায় পড়ে গেছে বার্সেলোনা।
যোগ করা সময় অবশ্য একেবারে খালি হাতে ফেরার উপক্রমও হয়েছিল কিকে সেতিয়েনের দলের। স্প্যানিশ স্ট্রাইকার নলিতোর শট তখন গোললাইন থেকে কোনোমতো ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। বার্সার বিপক্ষে এক পয়েন্ট উদ্ধার করে সেল্টার লাভ হয়েছে দ্বিগুণ। পয়েন্ট টেবিলের ১৬ তে থাকা সেল্টার লিগে টিকে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
বালাইদোসে ২০১৫ সালের পর থেকে জয়ের মুখ দেখেনি বার্সেলোনা। তবে সেল্টার বিপক্ষে তেমন কোনো শঙ্কাই প্রথমার্ধে ভর করেনি বার্সার ওপর। রিকি পুজ, আনসু ফাতিদের একাদশে নামিয়ে বার্সার আক্রমণভাগে গতিও ফিরেছিল।
ম্যাচের একেবারে শুরুর দিকেই জেরার্ড পিকের হেড ফিরে এসেছিল বারপোস্টে লেগে। যদিও এগিয়ে যেতে এরপর খুব বেশি সময় নেয়নি বার্সা। ২০ মিনিটে সেল্টার বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক নিতে গেলেন মেসি। সেল্টা খেলোয়াড়রা ব্যস্ত ছিলেন মেসিকে নিয়েই। কিন্তু সরাসরি শট না নিয়ে হালকা চিপে মেসি বল উঠিয়ে দিয়েছিলেন গোলের সামনে থাকা সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে। তিনিও জানতেন কী ঘটছে। সেল্টাকে অপ্রস্তুত করে দিয়ে সুয়ারেজের হেডে করা গোলে এগিয়ে যায় বার্সা।
সেল্টা অবশ্য গোল খেয়ে ভালোই জবাব দিচ্ছিল। স্টেগানের একটি ভুল ধরে ম্যাচে প্রথমবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে সেল্টা। অকায় ইয়োক্সলুর শট তখন স্টেগান ঠেকিয়ে দেওয়ার পর বারপোস্টে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলে আরও একবার গোলে শট করেছিলেন আসপাস। তবে স্টেগান বাধা সে দফায় আর পেরিয়ে যাওয়া হয়নি সেল্টা অধিনায়কের।
সেল্টার আক্রমণে তখনও অতটা চাপে পড়েনি বার্সা। অন্যপ্রান্তে মেসিরা একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করে যাচ্ছিলেন। তাই সঙ্কটে পড়ার অবস্থাও তৈরি হয়নি। ম্যাচ শেষে অবশ্য ওই মুহুর্তগুলোই আফসোসে পরিণত হওয়ার কথা বার্সার জন্য। ফাতি বক্সের ভেতর ভালো জায়গায় বল পেয়েও মেরেছেন ওপর দিয়ে। আরেকবার মেসি বক্সের বাইরে থেকে স্বভাবসুলভ ছন্দে ডিফেন্ডার কাটিয়ে গোলে শট করেও ‘অস্বাভাবিক’ ভাবে বল মেরেছেন গোলবারের পাশ দিয়ে।
এরপর দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়েছে বার্সা। বিরতির পর ৫ মিনিট না গড়াতেই মিডফিল্ডে বল পজেশন হারিয়ে বসেন ইভান রাকিটিচ। আসপাস তখনও সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। বার্সার রক্ষণ তছনছ করে বল উড়িয়ে মেরেছিলেন ইয়োক্সলুর উদ্দেশ্যে। ডান পাশ থেকে তার স্কয়ার পাস বক্সের ভেতর খুঁজে পায় ফেদর স্মলভকে। ফাঁকা বারে বল জড়িয়ে রাশিয়ান স্ট্রাইকার ম্যাচে ফেরান সেল্টাকে।
চাপে পড়ে যাওয়া বার্সাও দারুণ জবাব দিয়েছিল। আরও একবার মেসি-সুয়ারেজ জুটিই আলোর নিশানা দেখিয়েছিলেন বার্সাকে। ৬৭ মিনিটে মেসির পাস থেকে দারুণ এক টার্ন নিয়ে বাম পায়ের শটে দূরের পোস্টে বটম কর্নারে বল জড়িয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান সুয়ারেজ।
লম্বা ইনজুরি থেকে ফিরে দারুণ দুইটি গোল করে সুয়ারেজই হতে পারতেন ম্যাচের নায়ক। অথবা বার্সার হয়ে ২৫০ অ্যাসিস্ট পূরণ করা মেসিও আলো কাড়তে পারতেন। কিন্তু দিনশেষে সব কেড়ে নিয়েছেন আসপাস। তাতে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা রিয়াল মাদ্রিদের।