বাসা ভাড়া নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সব নিয়ে উধাও!
রাজধানীর শুক্রাবাদের বাসিন্দা রবিন আকরাম। ১০ বছর ধরে তিনি ঢাকা থাকেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। করোনায় এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে রাজধানীর এই বাসিন্দার। সম্প্রতি এক অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। তার বাসা থেকে চুরি হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাল।
৮ আগস্ট (শনিবার) হঠাৎই মোবাইলের ওপাশ থেকে কেউ একজন জানান তিনি ‘সুমন’। হুট করেই আগের বাসাটা ছেড়ে দেয়ায় নতুন বাসায় উঠতে হবে দ্রুত। এদিকে করোনার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাড়িতে চলে যাওয়ায় গত দুইমাস ধরে রবিনের মেসটি ফাঁকাই পড়ে ছিলো। একরুমের মেসে ছিলেন একাই। আর তাই রুমমেট চেয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু টু-লেট সাটান রবিন। এই টু-লেট দেখেই ফোন করেছিলো সুমন নামের ওই ব্যক্তি।
সুমন ফোনে রবিনের কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চান। এরপর তিনি নিজে আসেন বাসা দেখতে। নিচতলার মাঝারি সাইজের একটা মেস বাসা। পাশের দুই রুমের একটি ফাঁকা, অন্য রুমে রয়েছেন মাত্র একজন। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ায় এ অবস্থা। সব কথাবার্তা শেষে সুমন জানান তিনি আজই উঠতে চান রবিনের বাসায়। তবে, তার কাছে আছে মাত্র ৫০০ (পাঁচ শ) টাকা। বাকি টাকা দিতে পারবেন দিন দুয়েক পরে।
রবিন অনেক ভেবে চিন্তে এইসময়ে মেসের লোক সংকটের কথা বিবেচনা করে সুমনের শর্তে রাজি হয়ে যান। সুমন রাত ১০টা নাগাদ একটি মাঝারি আকারের ব্যাগ নিয়ে হাজির হন রবিনের বাসায়।
রাতে আড্ডা, আলোচনা আর পরিচিতি পর্ব শেষে সুমনের কাছ থেকে তার ভোটার আইডি কার্ড, বাসা ভাড়ার ফরমসহ বেশ কিছু কাগজ সংগ্রহ করেন রবিন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে যান দু’জন। সকালে উঠে আরো কিছু সময় হয় আলোচনা, চলে খোশগল্প।
আলোচনার এক পর্যায়ে সুমন জানান, তিনি নওগাঁর একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। টার্গেট পূরণ না করতে পারায় তাকে ঢাকায় ট্যান্সফার করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাই দ্রুত বাসা দরকার হলো তার।
৯ আগস্ট জোহরের নামাজের আগে রবিনের সাথে শেষ কথা হয় সুমনের। সুমন রবিনকে জানান, আগামীকালই রবিনকে তিনি তার মেস ভাড়ার বাকি টাকা পরিশোধ করবেন। সাথে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নিয়ে আসবেন।
নামাজের জন্য বের হন রবিন। সুমন ছিলেন রুমেই। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে রবিনকে বিদায় জানান ২২-২৩ বছরের শ্যাম বর্ণের এই ব্যক্তি। এরপর ১২-১৫ মিনিটের মাথায় কাছের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফেরেন রবিন। তিনি রুমের সামনে এসে দেখেন বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগানো। দরজার খুলে ভেতরে ঢুকেই রবিনের চক্ষু চড়কগাছ! তিনি দেখেন তার ড্রয়ারের তালা ভাঙা। নেই মোবাইল, মানিব্যাগ, ল্যাপটপসহ দামি বেশ কিছু জিনিস।
আজ দুই থেকে তিনদিন পেরিয়ে গেলেও সুমনের খোঁজ মেলেনি। রবিনও তার জিনিসপত্র হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।