আগামী ২৭ মার্চ ঢাকায় বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২৭ মার্চ ঢাকায় বৈঠকে বসবেন। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষকে গুরুত্ব দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে ওই বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক শেষে গতকাল রবিবার ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী একসঙ্গে উদযাপনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।
২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের আগে বাংলাদেশ ও ভারত সচিব পর্যায়ের চারটি বৈঠক করবে। এর মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে নয়াদিল্লিতে। অন্যদিকে বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র ও নৌপরিবহন সচিবদের বৈঠক হবে ঢাকায়।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, শীর্ষ বৈঠকে সই করার জন্য দুই দেশ বর্তমানে চার থেকে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে কাজ করছে। সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ঢাকায় আসতে পারেন।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আগামী মার্চ মাসে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মোদি ঢাকা সফরের অপেক্ষায় আছেন। কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে সফর অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাব্য সফরের জন্য দুই দেশই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই ২০২১ সালকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকারের স্মৃতিবিজড়িত মুজিবনগর থেকে ভারতের নদীয়া পর্যন্ত সড়ককে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ হিসেবে নামকরণ করতে নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছেন শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আগামী মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ওই সড়কটি উদ্বোধন করা হতে পারে। এ ছাড়া ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুও সেদিন উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাণিজ্য ইস্যুতে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এরই মধ্যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাণিজ্য বাধাগুলো নিরসন হলে বাণিজ্য আরো বাড়ার সুযোগ আছে। বাণিজ্যসচিবদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, কভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘এয়ার বাবল’ ব্যবস্থা আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দুই দেশ সীমিত পরিসরে হলে পর্যটক ও শিক্ষার্থী ভিসা আবারও শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চলাচল দ্রুত শুরু করতে ঢাকা অনুরোধ জানিয়েছে। কানেক্টিভিটি সহজ করতে ভারতের নতুন রেল রুট ও স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতেও বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, নরেন্দ্র মোদি আগামী মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে গিয়েও সম্মান জানাতে পারেন। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথিরা ঢাকায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানান।
নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে ঢাকা সফরের সময়ও ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে ভারতেও বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। মোদি সরকারের উদ্যোগে তৈরি বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর নয়াদিল্লিতে প্রদর্শনী শেষে এবার ঢাকায় আসছে। ঢাকার পর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে ওই ডিজিটাল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।