মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ভার্চুয়ালি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলন ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘এশীয় রূপান্তর উপলদ্ধি: ভাষা ও সাংস্কৃতিক বন্ধন - শিক্ষা ও সমাজে অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য বহুভাষাভাষীত্বকে প্রতিপালন’, এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানটির সূচনা করা হয় এবং এর পরে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তা হিসেবে প্যানেলে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফকরুল আলম, মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি অব মালয় স্টাডিজের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ড. সালিনা বিনতি জাফার, ইউনেস্কোর এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল ব্যুরো অব এডুকেশনের ডিরেক্টর শিগেরু আয়াগি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ও শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুই দিনব্যাপী চলা এ সম্মেলনের প্রথম দিনে অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী দাতুক সেরি ওয়াই বি দাতো শ্রী হাজাহ ন্যান্সি শুকরি।
এছাড়াও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও মানবিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম এবং টেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজান্ট প্রফেসর ড. ওয়ান জাওয়াই ওয়ান ইব্রাহিম আলোচক হিসেবে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
ভার্চুয়াল এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সংগীতশিল্পী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মাতৃভাষা যে নিজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাহক, সেই কথাটি সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ক্ষণটিই যথার্থ সময়। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও আন্তঃসাংস্কৃতিক আলোচনার প্রসার ঘটানোও এটির অংশ।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের হাই কমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, সাম্প্রতিক বিশ্বায়নের ফলে ভাষাগত বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কোনো কোনো বিচারে এটি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সংযোগ সাধনের মধ্যে দিয়ে বৈচিত্র্যময় ভাষাগুলোর প্রজন্মান্তরে টিকে থাকাটা সম্ভব করে তুলেছে।
হাই কমিশনার আরও বলেন, আমাদের প্রয়োজন বহুভাষার জন্য আন্তঃসীমান্ত সহায়তা, যেটির উদ্দেশ্য হলো জাতীয়ভাবে সংহতিমূলক, অর্থনৈতিকভাবে ফলপ্রসূ আর সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত হওয়া। মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী দাতুক সেরি ন্যান্সি শুকরি তার উদ্বোধনী বক্তব্যে ভাষাগুলোর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন কেননা তাতে করে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করা যাবে। একইসাথে তিনি পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী সেটি উদযাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানান।
দুইদিন ব্যাপী চলা এ আন্তঃসীমান্ত বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন, মালয়েশিয়ার পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এবং মালয়েশিয়ার টেইলর’স ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি সাংস্কৃতিক আয়োজন ছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলোও কুয়ালালামপুরে তাদের নিজ নিজ কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিত্বের মধ্য দিয়ে রেকর্ডকৃত ভিডিওর মাধ্যমে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।