প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব শুরু বুধবার
DESK NEWS 4TV প্রতি বছর পূর্ণিমার তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এ উৎসবটি উদযাপন করে থাকে। এ উৎসবকে ঘিরে মারমা পল্লীগুলোতে চলছে নানা আয়োজন, বইছে আনন্দের বন্যা। বুধবার (২০ অক্টোবর) থেকে দুই দিনব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে উদযাপিত হবে এ উৎসব। এরমধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা তৈরির উৎসব, ফানুস ওড়ানো, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা আয়োজন। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বাঁশের তৈরি একটি রথ (পাখি সদৃশ) তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী মারমা গানের সাথে রথটি টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করে। এ সময় রথের মধ্যে মোমবাতি আগরবাতি জ্বালিয়ে উৎসবের শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়। রোয়াংছড়ির মারমা তরুণী মাসিং খই বলেন, ওয়াগ্যোই পোয়ে আমাদের খুবই আকর্ষণীয় একটি উৎসব। এ উৎসবে আমরা ফানুস উড়াই, তাই অনেক আগে থেকে বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে ফানুস বানিয়েছি। উহ্লায়ী মার্মা বলেন, প্রবারনার সময় রথ টানব, পিঠা বানাব বন্ধুরা মিলে ফানুস উড়াব, খুব মজা হবে তাই বন্ধুরা মিলে অনেক ফানুস বানিয়েছি। তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার দিন বিহার থেকে বের হয়ে সব বিবাদ ভুলে গিয়ে একে অন্যের প্রতি সম্ভাষণ জানানো ও মনের সব সংকীর্ণতা পরিহার করে অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মহামিলনের নিজ সংসারে ফিরে আসা হয়, তাই এই উৎসবে মেতে ওঠবে মারমা তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, দায়ক-দায়িকা, উপাসক উপাসিকাসহ বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা। শুধু তাই নয়, পাহাড়ি বাঙালি ও বাইরে থেকে আগত পর্যটকসহ সবার অংশগ্রহণে মারমাদের এ উৎসবটি হয়ে উঠে সম্প্রীতির মিলন মেলা। উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি লাইচিং মার্মা বলেন- প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা প্রবারণা পূর্ণিমার আয়োজন করেছি। তবে করোনা মহামারির কারণে এবার আমাদের অনুষ্ঠানমালা কিছুটা সীমিত করা হয়েছে। প্রত্যেকবার ৩-৪ দিন অনুষ্ঠান করলেও এবার আমরা দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান পালন করব। প্রথম দিন ফানুস উড়ানো হবে, রাতে পিঠা তৈরি করা হবে ৫টি পয়েন্টে এবং পরদিন রথ টেনে মন্দিরগুলো প্রদক্ষিণ শেষে নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এ বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, এই উৎসবকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা বান্দরবানে আসেন, তাই এই অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। উৎসব পালনে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এবং নিরাপদে যাতে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। প্রবারণা পূর্ণিমা মারমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রাণের উৎসব। আর এই প্রাণের উৎসবে ভগবান বুদ্ধকে মনের আশা পূরণের জন্য কাগজে ফানুস বাতি তৈরি করে তাতে আগুন দিয়ে আকাশে উড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা। প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল, তাই বুদ্ধের ত্রিশূল বিজড়িত এদিনটি প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে।