টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২০
বি এ রায়হান, গাজীপুরঃ গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিসিক এলাকার চারটি পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। পরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৩টি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কতৃপক্ষ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শ্রমিকরা জানায়, গত শনিবার (২৯ জানুয়ারি) টিভোলী এপারেলস লিঃ এর ফিনিশিং সেকশনের সহকারি রিপা আক্তারকে লাঞ্ছিত করেন কারখানার পঞ্চম তলার উৎপাদন ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান। এসময় রিপাকে ধাক্কা দিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয় লুৎফর। বিষয়টি কারখানার অন্য শ্রমিকদের মধ্যে জানাজানি হলে ওইদিনই বিচারের দাবিতে শ্রমিকরা উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে শ্রমিকরা ১২দফা দাবী উল্লেখ করে মালিক পক্ষের নিকট একটি দাবিনামা উপস্থাপন করেন। সোমবার শ্রমিকরা উৎপাদন কাজে যোগ না দিয়ে বাসায় চলে যায়। পরে মালিক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে (নো ওয়ার্ক, নো-পে) অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার নোটিশ ফ্যাক্টরির সামনে টানিয়ে দেয়। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা কারখানার সামনে এসে বন্ধের নোটিশ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সামনে এসে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পুলিশ বাঁধা দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এসময় পুলিশ গ্যাসগান ও শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে শ্রমিকরা সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আর বি এস আর ফ্যাশন লিমিটেড এবং বিসিক ফকির মার্কেটে জড়ো হয়ে পুলিশের উপর ত্রিমুখী হামলা চালায়। পরে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় শ্রমিকরা যাওয়ার পথে পেট্রিয়ট ইকো লিমিটেড কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর চালায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে মালিকপক্ষ, সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আর বি এস আর ফ্যাশন লিমিটেড ও রেডিসন অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা ছুটি ঘোষনা করে। টিভোলী এপারেলস লিমিটেডের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, শ্রমিকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে ঘটনার দিনই উৎপাদন ব্যবস্থাপককে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা তা সত্ত্বেও কিছু অযৌক্তিক দাবি পেশ করেন যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ দক্ষিন) মমোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, টিভলি অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে অন্যান্য কারখানাগুলোতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালায়। এতে পুলিশ বাঁধা দিলে পুলিশের ওপরও ইইটপাটকেল ছুঁড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।