টঙ্গীতে কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদা আদায়।
বি এ রায়হান,( টঙ্গী) গাজীপুরঃ গাজীপুরের টঙ্গীতে কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টঙ্গী বাজারের সাপ্তাহিক হাটে আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিউনিটি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সঙ্গে করা হয় দুর্ব্যবহার। অভিযোগ রয়েছে, ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমানের নির্দেশে তোলা হয় এই চাঁদা। মজিবুর রহমান টঙ্গী বাজার চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সরেজমিনে শনিবার মধ্যরাতে টঙ্গী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক হাট উপলক্ষে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা টঙ্গী বাজারে আসেন। বাজারের মিতালি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে শুরু করে, হাজী মার্কেট, ভাওয়াল বিপনি মার্কেট, নোয়াখালী মসলা পট্টি, বস্তা পট্টি, তুরাগ নদীর পাড় রোড, বৌ- বাজার রোড, সিরাজউদ্দীন সরকার বিদ্যানিকেতন রোড, গরুর হাট রোডসহ বিভিন্ন অলিগলিতে বিট ভাড়া নিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার দোকান বসানো হয়। রাত ১টার পর হঠাৎ দু'জন লোক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা তোলা শুরু করেন। বাজারের খাজনা পরিশোধের পরও ২০ টাকা চাঁদা পরিশোধ নিয়ে কেউ কেউ জড়াচ্ছেন বাকবিতন্ডায়। এসময় ওই দুই ব্যক্তিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেও দেখা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করা ওই দুই ব্যক্তি হলেন- মোঃ কবির (৪০), মোঃ ফজলু (৩৮)। হাটে আগত এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চাঁদা নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়াতে দেখা যায় ফজলুকে। জানতে চাইলে ফজলু বলেন, চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানের নির্দেশে কমিউনিটি পুলিশের জন্য প্রত্যেক দোকান থেকে ২০টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। করোনার সময় এই টাকা আদায় বন্ধ ছিলো, যা গত দুই সপ্তাহ যাবত পূণরায় চালু হয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে এই চাঁদা তোলা হবে বলেও জানায় ফজলু। ফজলু আরও বলেন, গত সপ্তাহের হাটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিউনিটি পুলিশের নামে আমি ১০ হাজার টাকা আদায় করেছি। আমার সঙ্গে কবির নামে আরেকজন চাঁদা আদায় করেন। ভোর রাত পর্যন্ত টাকা উঠানোর পর সব টাকা জমা দেওয়া হয় বাজার কমিটির নেতা মজিবুর রহমানের নিকট। তিনি আমাদের হাজিরা হিসেবে এক হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা বুঝে নেন। কমিউনিটি পুলিশের নামে চঁদা উঠানো আরেক যুবক কবির বলেন, বাজারের যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা কাজ করে। তাদের জন্য দোকান প্রতি ২০ টাকা তোলা হয়। বাজার কমিটির নেতারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই টাকা তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার কারণে এই চাঁদা আদায় বন্ধ ছিলো, ঈদ উপলক্ষে আবারও চালু করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের নির্ধারিত খাজনা পরিশোধের পরও নানান অজুহাতে টাকা নেয়া হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত কমিউনিটি পুলিশের নামে প্রত্যেক দোকান ও বিট থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা তুলছে। এই বাজারে আমাদের সাথে রীতিমত জুলুম করা হচ্ছে। আমরা সপ্তাহে একদিন হাটে আসি। এখানে কাউকে চিনিও না। যে যার মতো এসে চাঁদা দাবি করছে। বাজারের খাজনার টাকা ছাড়াও বিট প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা দিতে হয়। চাঁদা আদায় করছে বাজারের প্রভাবশালীরা, তাই বাজারের টহল পুলিশও তাদের কিছু বলেনা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও টঙ্গী বাজার চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, টঙ্গী বাজারের যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের আটজন সদস্য কাজ করে। তাদের জন্য ঈদের বকশিস হিসেবে দোকান প্রতি ২০টাকা তোলা হচ্ছে। টঙ্গী পূর্ব থানার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন দাবি করে মজিবুর রহমান বলেন, আমরা থানায় জানিয়ে এই টাকা তুলছি। এটা কোন চাঁদা নয়। ঈদ উপলক্ষে বকশিস নেয়া হচ্ছে। টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাবেদ মাসুদ বলেন, কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদা তোলার কোন নিয়ম নেই। ইতিপূর্বে এধরনের অভিযোগে অবিযান পরিচালনা করে বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবারো এইরকম অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।