গাজীপুরে ১৭ মামলার আসামী ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদার গ্রেফতার
বি এ রায়হান, গাজীপুরঃ গাজীপুর মহানগরীর সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কথিত নেতা ১৭ মামলার আসামী নুরুজ্জামান সরদার রবিন ওরফে রবিন সরদার সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা পুলিশ। বুধবার দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২২নং ওয়ার্ডের জাহাঙ্গালিয়া পাড়ায় বেন্টিলি সোয়েটার লিমিটেড নামক একটি পোশাক কারখানার বর্জিত মালামালের ব্যবসায়ীর কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে উক্ত কারখানা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপক ফজলুল হক বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে গাজীপুর সদর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত হলেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত রুহুল আমিন সরদারের ছেলে রবিন সরদার (২৬), একই এলাকার সিরাজ সরদারের ছেলে শাহীন ওরফে শামীম সরদার (৩২), গাজীপুরের যোগীতলা এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে জোবায়ের আহম্মেদ হাওলাদার (২১) ও চতর এলাকার আতাউল্লাহর ছেলে মনির (২৬)। এজাহার সূত্রে জানা যায়, নগরীর জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকায় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংসদ এইচ বি এম ইকবালের মালিকানাধীন বেন্টিলি সোয়েটার লিমিটেড নামের কারখানার বর্জিত মালামাল ক্রয় করেন ব্যবসায়ী আবু হানিফ। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ক্রয়কৃত মালামাল নিতে থাকেন ওই ব্যাবসয়ী। কিছুদিন যাবৎ ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদার ও তার সহযোগীরা ওই ব্যবসায়ীর কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কথিত ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদার ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চাঁদাবাজি, অপহরণ, নারী নির্যাতনসহ ১৭ মামলা আসামী হয়েছেন। রাজনৈতিক জীবন বেপরোয়া হয়ে উঠা রবিন সম্প্রতি তার অপকর্ম ধামাচাপা দিতে পুলিশের বিরুদ্ধেও মানববন্ধন করেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক জীবনে পা রেখে জয়দেবপুর থানায় প্রথম মামলার আসামী হয়েছেন রবিন ২০১৩ সালে যার মামলা নং ৩৪(৯) ধারা ১৪৩/৩৪২/৩২৩/৩২৪/ ৩২৬/ ৩০৭/৩০২/৫০৬/১১৪ এরপর ২০১৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে তার অপকর্মের কারনে জয়দেবপুর, বাসন ও সদর থানায় একে একে ১৫ টি মামলা হয় যার মামলা নম্বরগুলো হলো জয়দেবপুর থানা ০৭(৪)১৭ ধারা, ১৪৩/৪৪৮/ ৩২৩/ ৩৩২/৩৫৩/১৮৬/৪২৭/৫০৬। জয়দেবপুর থানা ১৪৭(৪)১৭ ধারা, ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ( সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৩)/৩০। জয়দেবপুর থানা মামলা নং ৪৫(৮)১৭ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ ও সি/এস নং ২৫১ ৩/৯/২০১৯। জয়দেবপুর থানা মামলা নং ১১১(৯) ১৭ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৫/ ৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬। জয়দেবপুর থানা মামলা নং ৭১(১০)১৭ ধারা১৪৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/ ৩০৩/১১৪। সদর থানা মামলা নং ১৯(০২)১৯ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬/(২)। বাসন থানা মামলা নং ৩৬(৫)১৯ ধারা ১৪৩/১৪১/৩২৩/৩২৪/ ৩২৬ / ৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬/১১৪। বাসন থানা মামলা নং ২১(৬)১৯ ধারা ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/ ৩৭৯/ ৩০৭/৫০৬। বাসন থানা মামলা নং ২২(৬)১৯ ধারা দ্রুত বিচার আইন ৪/৫। বাসন থানা মামলা নং ২৩ (৬)১৯ ধারা ৩৪১/৩৮৫/৩৪। বাসন থানা মামলা নং ২৮(৬) ১৯ ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/ ৩৭৯/৫০৬। বাসন থানা মামলা নং ২৯(৬)১৯ ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/ ৩৭৯/৩৮৫/৫০৬। মামলা নং ৩০(৬)১৯ ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/ ৩০৭/৩৭৯/৩৮৫/৫০৬। সদর থানা মামলা নং ৩৫ (০১)২০২১ ধারা ১৪৩/৩৬৫/৩২৩/৫০৬/৩৪। চাঁদাবাজি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গতকাল গাজীপুর সদর থানায় আরো দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। বেপরোয়া ওই কথিত ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদারের মত এমন একজন চিহ্নিত অপরাধী সম্প্রতি মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধেও মানববন্ধন করেছিলেন। এতে এলাকা সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এলাকাবাসীর অভিযোগ সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন রবিন সরদার। তার গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। এধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী ও কলেজ শিক্ষার্থীরা। গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের ছাত্রলীগ নেতা রবিন সরদারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৭টি মামলা রয়েছে।