চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সভাপতির তীব্র সমালোচনা করলেন চসিক মেয়র
চট্টগ্রাম ব্যুরো Channel 4TV : চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তীব্র সমালোচনা করলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ‘মেয়র হাসতে হাসতে মানুষ খুন করতে পারেন’-এ বিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী পাগলের প্রলাপ বকছেন। তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে গেছেন, উম্মাদ হয়ে গেছেন। তিনি মেয়র হতে চেয়ে পারেননি। ভবিষ্যতেও পারবেন না-এসব জেনে এ ধরণের কথা বলছেন।
নগর ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একজন সুস্থ্য মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ কোনোদিন এভাবে কথা বলতে পারেন না। নিজে ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। সিটি কর্পোরেশনে নানা অনিয়ম করে গেছেন। চিটাগাং স্টিল মিলস থেকে একটি পরিত্যক্ত মেশিন কিনে ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক ওয়াট বিদ্যুৎও উৎপাদন করতে পারেননি। উল্টো কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। ওষুধ কারখানা নির্মাণের নামে বিদেশ থেকে পরিত্যক্ত সরঞ্জাম কিনে চরম দুর্নীতি করেছেন।
গত রোববার বিকেলে লালদীঘি মাঠের এক সমাবেশে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে খুনী আখ্যা দেন। সিটি করপোরেশন পরিচালনা নিয়েও নানা বিষোদগার করেন। এর জবাবে আজ সোমবার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, তিনি একসময় মেয়র ছিলেন। তিনি এখন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে তিনি ফোরামে কথা বলতে পারতেন। সেখানে না পারলে কেন্দ্রে বলতেন।
মেয়র অভিযোগ করেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালেই চট্টগ্রামের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেননি। উল্টো নালার ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। নগরীর ফুটপাতগুলোতে হকার বসিয়ে সেগুলো জনসাধারণের চলাচলের অনুপযোগী করে তুলেছেন। আমি এখন হকারদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আমি বলেছি, তারা বিকেল পাঁচটার আগে ফুটপাতে বসতে পারবে না। তাদের সংখ্যা গণনার কাজ চলছে। চট্টগ্রামে বিলবোর্ড সংস্কৃতিকে চালু করেছিলেন। আমি সেই বিলবোর্ড থেকে চট্টগ্রামকে সম্পূর্ণরুপে মুক্ত করেছি। এখন তিনি এটাকেও বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।
মেয়র বিজয় মেলার জায়গায় সুইমিং পুল নির্মাণ করছেন-মহিউদ্দিন চৌধুরীর এমন অভিযোগের জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিজয় মেলা থেকে প্রতিবছর প্রচুর টাকা আয় হয়। গতবছর তিনি এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেছেন। কই কোথাও কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে এক টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন এমন নজির আছে?
মেয়র নাসিরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, মেয়রের বক্তব্য সুন্দর হওয়া চাই। তিনি ইজ্জত রাখতে জানেন না। তিনি যা বলেছেন, তাতে আমি দুঃখিত নই। তিনি যদি অন্যায় করে থাকেন, আমি তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখি।
তিনি বলেন, আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে প্রতিরোধ করব। এজন্য পাঁচ হাজার লাঠি প্রস্তুত করে রেখেছি। আমি চট্টগ্রামে জঙ্গিদের আস্তানা করতে দেই নাই। হেফাজতে ইসলামকে প্রতিহত করেছি। ভবিষ্যতেও এই লাঠি দিয়েই যেকোনও অপশক্তিকে আঘাত করব, প্রতিহত করব।
মেয়র আ জ ম নাছিরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নাছির সাহেব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যেতে পারেন না। এটা লজ্জার ব্যাপার। রংপুরের মেয়র পর্যন্ত পতাকা ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
নিজে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি যদি দুর্নীতি করে থাকি, তাহলে তিনি তার প্রমাণ দিতে পারেন।
রোববারের জনসভার মঞ্চে বিএনপি নেতা ও নাশকতার মামলার আসামিরা ছিলে-মেয়রের এমন অভিযোগের জবাবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, তারা কর দেন। করদাতা হিসেবেই তাদের অভিযোগ তুলে ধরতে এসেছিলেন। আর বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আমার বন্ধু হিসেবে মঞ্চে এসেছিলেন। কিন্তু নাছিরের ভয়ে কেউ জোরালোভাবে বক্তব্য দেননি বলে উল্লেখ করেন।