সানাগাজীর কাজিরহাট রেগুলেটর নদীতে বিলীন হওয়ায় চরম দুর্ভোগে দুপারের মানুষ
সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী প্রতিনিধিঃ
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নে ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত কাজিরহাট রেগুলেটর দীর্ঘ ১৬ বছর পরও সংস্কার করা হয়নি। রেগুলেটরের দুই পাশে ফেনী ও নেয়াখালী জেলার দুই উপজেলার দুই লাখ মানুষের যাতায়াতের বাহন হচ্ছে এখন একটি মাত্র নৌকা। এই নৌকা দিয়ে স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও প্রতিদিন ৭-৮ হাজার মানুষ চলাচল করে। কর্তৃপক্ষ বলছে রেগুলেটরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের দাবি রেগুলেটর সংস্কার করা না হলেও এখানে একটি ব্রিজ করা হোক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সোনাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত কাজীর হাট রেগুলেটরটি ২০০১ সাল থেকে ভেঙে পড়ে আছে। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাধারণ মানুষ, নারী, শিশু নৌকা করে পার হতে দেখা গেছে। ঝুঁকি নিয়ে বহু নারীকে কোলে শিশুসহ গৃহস্থলি আসবাবপত্র, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল নৌকায় করে পার করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এভাবে নদীর দুই পাশের প্রায় দুই লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছে। এতবেশী জনবহুল ও দুই জেলার মানুষের চলাচলের এই গুরুত্বপূর্ণ রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়ায় একটি মাত্র নৌকাই তাদের চলাচলের মাধ্যম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে একদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্র আবদুর রহমান জানান, প্রতিদিন এই নৌকা পার হতে তাদের ২০ টাকা দিতে হয়।
এক নবজাতক শিশুর মা সাদিয়া আক্তার জানান, ‘খুব ঝুঁকি আর ভয়ের মধ্যেও কোলে এক শিশু, হাতে ধরে অপর শিশুকে নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হচ্ছি। রেগুলেটরটি ঠিক থাকলে বা সরকার এখানে একটি ব্রিজ করে দিলে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতোনা।’
বৃহষ্পতিবার সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, বাগিশপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরসাহাভিকারী উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর চরসাহাভিকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজ সামছুল হক নুরানী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, ২৪০ টি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা, মসজিদ, মক্তবের লোকজন এই একটি মাত্র নৌকা ব্যবহার করে দু’দিকে যাতায়াত করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু জানান, ফেনী জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লিংক রোড হচ্ছে এটি। রেগুলেটরটি না থাকার পরও প্রতিদিন ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা ও নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষ এই নৌকা দিয়ে পার হচ্ছে। রেগুলেটরের এক পাশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মৌলভী বাজার, কদমতলা বাজার, চরহাজারী বাজার, বসুরহাট বাজার, চৌধুরী হাট বাজার, অন্যদিকে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার কেরামতিয়া বাজার, কাজীরহাট বাজার, লিঙার বাজার, জমদ্দার বাজার, চানমিয়ার বাজার, ধনিপাড়া বাজার, ইতালি মার্কেট বাজার, ওলামা বাজার, বক্তারমুনশী বাজারের যাতায়াতের একটি মাত্র মাধ্যম এই এই নৌকা। রেগুলেটরের এখানে ছোট করে হলেও একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে মানুষের ভোগান্তি হতোনা।
হাফেজ সামছুল হক নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা জিয়াউর রহমান আক্ষেপ করে বাংলার দর্পন ডটকম’কে বলেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রীর এলাকা হওয়ার পরও এখানে দুই লাখ মানুষ দীর্ঘ ১২ বছর ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রেগুলেটরটি না থাকায় বাড়ি ঘরে যেমন পানি উঠে, তেমনি চরম ভোগান্তিতে নৌকায় করে পারাপার করতে হচ্ছে মানুষদের।’
নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী গ্রামের বাসিন্দা মো. রজিম মিয়া জানান, কাজির হাট এলাকায় আমার ব্যবসা। ছোট ফেনী নদীর ওপর রেগুলেটরটি না থাকায় নৌকায় করে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন তার ৭০-৮০ টাকা খরচা হয়। দৈনিক যতটাকা ব্যবসা হয় অর্ধেক টাকা নৌকার মালিককে দিয়ে দিতে হয়।
নৌকার ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়েছি, সেজন্য প্রতি যাত্রী থেকে দশ টাকা করে নিতে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম জানান, কাজিরহাট রেগুলেটরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে রেগুলেটর করা হবেনা। এখান থেকে স্থানান্তর করে নোয়াখালীতে মুছাপুর রেগুলেটর এন্ড ক্লোজার করা হয়েছে।