বাজেটের মূল লক্ষ্য দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণ, উৎপাদনমূখী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি : এনবিআর চেয়ারম্যান
এম. রফিকুল ইসলাম (চট্টগ্রাম) Channel 4TV : দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণ, উৎপাদনমূখী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থ বাজেটের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
চট্টগ্রাম চেম্বারে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সদস্য ও এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতাদের সাখে এ মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার কর্তৃক নির্মিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রস্তাব অত্যন্ত উন্নতমানের উল্লেখ করে চেম্বারের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে।
মো. নজিবুর রহমান বলেন, দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, রপ্তানিতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদনমূখী বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বাজেটে সাধারণ মানুষের জীবন স্পর্শকারী পণ্য কর অব্যাহতি পাবে। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও এসডি আইন বাস্তবায়ন অনলাইন ভিত্তিতে কার্যকর হবে। এটা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন, লালদিয়ার চরে খালি কন্টেইনার ইয়ার্ড তৈরী করা, গ্যান্ট্রি ক্র্যানের বিকল্প হিসেবে মোবাইল হার্বার ক্র্যান সংগ্রহ করা, বন্দরে স্ক্যানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আরও কনভেয়র বেল্ট স্থাপন করা উচিত।
তিনি বলেন, বারিক বিল্ডিং হতে বিমান বন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ, কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে মেরিন ড্রাইভ বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সম্প্রসারণ, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজারকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত খালসমূহ সংস্কার, কালভার্ট নির্মাণ, ¯ুইচ গেইট নির্মাণে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবী জানাচ্ছি।
এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রস্তাব জানিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত বর্তমান করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ, মহিলা এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানীর কর হার ২৫শতাংশ এর পরিবর্তে ২০শতাংশ এবং প্রাইভেট লিঃ কোম্পানীর কর হার ৩৫শতাংশ এর পরিবর্তে ৩০শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, রেফ্রিজারেটর এস্যাম্বলিং ইন্ডাষ্ট্রি আমদানিকৃত উপকরণের শুল্ক যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা, উৎপাদনমূখী শিল্পে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগবান্ধব এস.আর.ও প্রণয়ন, চট্টগ্রামে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার স্থাপনের আহবান জানাচ্ছি।
চেম্বার সভাপতি নতুন ভ্যাট আইনে কর হার ৭-১০ শতাংশ নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় অনলাইন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিশ্চিত করা, ক্ষুদ ও কুটির শিল্পের অব্যাহতি ৫০ লক্ষ টাকা, টার্নওভার কর নিবন্ধন সীমা ৮০ লক্ষ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা নির্ধারন করা, মূল্য সংযোজনের হার ২০শতাংশ এর পরিবর্তে ১৫শতাংশ ধরে এর করের হার ৩শতাংশ এর পরিবর্তে ২ শতাংশ করার সুপারিশ করেন। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট বিবেচনার অনুরোধ জানান।
সমাপনী বক্তব্যে চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, শিল্পায়ন ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট ও রাজস্ব নীতি ব্যাপক কর্মসংস্থান দেশের রাজস্ব আয়, প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতিধারাকে আরো বেগবান করতে হবে।
তিনি আগামী বাজেটে শুল্ক, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ব্যবসায়ী সমাজের প্রস্তাাবনার প্রতিফলন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করেন।
দীর্ঘদিন ধরে যারা আয়কর দাখিল করছে এমন ব্যক্তিদের ফাইল অডিটে না ফেলার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি মাহবুব চৌধুরী বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে আয়কর দিয়ে আসছে তাদের ফাইল অডিটে ফেলে শুধু শুধু হয়রানি করার কোন মানে হয়না। কর কর্মকর্তাদের কোন বিষয়ে কিছু জানার থাকলে অফিসে ডাকতে পারেন। সে বিষয়ে আলাপ করে সমাধান করা যায়। কিন্তু তা না করে করদাতার ফাইল অডিটে ফেলা হচ্ছে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ ও এম. এ. মোতালেব, প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল), কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ মাহফুজুল হক মনি, বিজিএমইএ’র পরিচালক কাজী মাহবুব উদ্দিন জুয়েল, বিকেএমই’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান, ওম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, আইসিএবি’র প্রাক্তন সভাপতি শওকত হোসেন প্রমুখ।