নীলফামারীর সৈয়দপুরের মানুষ সামসুদ্দীন রাজাকারের বিচার চায়
শাহ মো: জিয়াউর রহমান,নীলফামারী Channel 4TV :
দীর্ঘদিন পরে সৈয়দপুরের মানুষ সামস্ উদ্দিন (৭২) রাজাকারের একাত্তর সালের কুকির্তীর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে তাঁর বিচারের দাবি জানিয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্র হতে জানা যায়, প্রাণে বাঁচতে নীলফামারী জেলার ডিমলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময় ১৪ ডিসেম্বর পালিয়ে এসে সৈয়দপুরে আতœগোপন করেন সামস্ উদ্দিন রাজাকার। উদূভাষী প্রধান শহর সৈয়দপুরকেই নিরাপদ মনে করে সে। এখানে ছদ্দবেশ ধারণ করে আতœগোপনে থাকে দীর্ঘদিন। ৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সে আতœ প্রকাশ করে। ডিমলা থেকে লুট করে আনা টাকা দিয়ে শুরু করে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা। অল্প দিনেই সে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যায়। এরই মধ্যে পবিত্র মক্কায় গিয়ে হজ ব্রত পালন করেন সামস্ উদ্দিন রাজাকার। আর এভাবেই ডিমলার সামস্ উদ্দিন রাজাকার সৈয়দপুরে পরিচিতি পান ডিমলা হাজী নামে। সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রী পাড়ায় বিশাল অট্রালিকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলেন বহুতল আবাসিক ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন পৈত্রিক বাড়ি ডিমলার নাউতারা ইউনিয়নে যাতায়াত বন্ধ থাকায় সামস্ উদ্দিন রাজাকারের নাম এলাকার মানুষ এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিল। নতুন প্রজন্মও তাকে চিনে না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা করে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে পাঠায় তাতে ৬৪ নম্বরে রয়েছে সামস্ উদ্দিন রাজাকার ওরফে ডিমলা হাজীর নাম। একইভাবে সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল স্থানীয়ভাবে রাজাকারদের পাঠানো তালিকায় বহিরাগত রাজাকার হিসাবে ডিমলা হাজীর নাম রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ বিষয়ে সামস্ উদ্দিন রাজাকার ওরফে ডিমলা হাজীর সঙ্গে কথা হয় সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডাঃ সামসুল হক সড়কের তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগষ্ট মাসে স্থানীয় শান্তি কমিটির প্ররোচনায় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেই। ডোমার উচ্চ বিদ্যালয়ে এক পাকিস্থানী মেজরের নেতৃত্বে ২১ দিন অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে ওই মেজর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাদের চিলাহাটি সীমান্তে পাঠায়। তার মতে অপরাধ জগতের লোকজন রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় রাজাকার বাহিনী গঠনের মূল উদ্দেশই ভেস্তে যায়। তিনি দাবি করেন, রাজাকার হলেও যুদ্ধের সময় হানাদারদের হাত থেকে বাঙ্গালী নারীর সম্ভ্রম ও অনেকের জীবন বাঁচিয়েছি। তাই রাজাকার হলেও আমি অনুতপ্ত নই।
মুক্তিযুদ্ধে সামস্ উদ্দিন রাজাকারের ভুমিকা প্রসঙ্গে ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল হক জানান, সামস্ উদ্দিন ছিলেন তালিকাভুক্ত রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে লুট, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। দীর্ঘদিন আমরা তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না। বর্তমানে দেশে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। প্রত্যাশা করছি সেও বিচারের আওতায় আসবে। আমরা তার বিচার চাই। সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ একরামুল হক জানান, ডিমলা ইউনিটের তালিকা অনুযায়ী আমরাও বহিরাগত রাজাকার হিসাবে তার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। সামস্ উদ্দিন রাজাকারের জন্মস্থান ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ লেলিন জানান, সামস্ উদ্দিন রাজাকারের (ডিমলা হাজী) ৭১ সালের কুকির্তীর কথা লোকের মুখে মুখে আছে। যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায় এলাকার মানুষ তার বিচার চায়।