মুন্সীগঞ্জের গজারিয়াবাসী আজও ভুলেনি সেই দিনটি ৯ মে গনহত্যা দিবস,
রুবেল মাদবর মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি Channel 4TV :
৯ই মে ১৯৭১। ভোর ৪ টা ৩০ মিনিট। নিরব নিস্তদ্ধরাতের প্রহর শেষে ডাহুক ডাকা ভোরের আগে মুয়াজ্বিম যখন সুউচ্চ মিনারে আযান ফুঁকছিল অন্যদিকে পাকহানাদার বাহিনী চালায় পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ। পূর্বের আঁকাশ লালে লাল হওয়ার পূর্বই পাকবাহিনীরদের বরবর্চিত হত্যাকান্ডে গজারিয়ারজনপথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠে। গুলিতে ও ব্রাশফায়ারে নির্বিচারে নির্মমভাবে ৩ শত ৬০ জন ছাত্র, জনতা, মুক্তিযোদ্ধা,বুদ্ধিজীবি কে হত্যা করে। আহত করে শতাধিক শিশু ও নারী-পুরুষ।পুরো এলাকা পরিণত হয়েছিলো লাশের স্তুপে। রক্তের স্রোতে লাল হয়ে গিয়েছিল তখনকার পল্টন সড়ক (বর্তমানে সোনালী মার্কেট)।সেদিন গজারিয়া ইউনিয়নের ৭ থেকে ৮টি গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী যাকে যে অবস্থায় পেয়েছে সে অবস্থায় হত্যা করে। সেদিনের নিষ্ঠুরতম হত্যার ঘটনা লিখতে আজও গা শিউড়ে উঠে।মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনটিতে পাকিস্তানী জল্লাদরা এ অঞ্চল নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সৃষ্টি করে ট্র্যাজিক ইতিহাসের। স্বাধীনতা যুদ্ধে গজারিয়ার দামাল ছেলেরা সংগঠিত হয়ে যুদ্ধেযাওয়ার জন্য গোপনে ট্রেনিং নিচ্ছিলেন গোষাইর চর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানা ও ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে ওঠায় এলাকার রাজাকাররা তা সহ্য করতে পারেনি। তাই এ খবর পাঠায় পাকিস্তানী আর্মিদের কাছে। তিন দফা খবরের ভিত্তিতে পাকবাহিনীসে দিনে গজারিয়ার ফুলদী নদীর উপকণ্ঠের গ্রামগুলোতে অপারেশন চালিয়ে জঘন্যতম এ বর্বরতা চালায়।স্বধীনতা যুদ্ধে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের যে সব এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছিল এর মধ্যে গজারিয়ার গণহত্যা অন্যতম। এই ট্র্যাজিক ইতিহাস হেমলেটের অন্তযন্ত্রণা কিংবা ইডিপাসের বক্ষবেদী আর্তনাতকেও হার মানায়। তাই ইতিহাস ঐতিহ্যে গজারিয়া জাতীয় পর্বায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও শুধুমাত্র গণহত্যায় ৩শত ৬০ জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষের আত্মবলির কারনে গজারিয়া এলাকা মুক্তিযুদ্ধের মূল ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। সেদিন গণহত্যার লাশগুলি সৎকারের জন্য দাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি। অনেক কে ঘরের পুরানো কাপড় কিংবা কলাপাতা পেছিয়ে ৭/৮ জনকে এক সাথে জড় করে চাপা মাটি দেওয়া হয়। গজারিয়ার টিএনটি সংলগ্ন কবরস্থান সহ গোসাইরচর, নয়ানগর, বালুরচর গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গণ কবর গুলো গজারিয়া ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও তাদের স্মৃতির উদ্দেগ্যে কোন স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা না হলেও , শহীদদের নামের তালিকা সঠিক ভাবে তৈরী করা না হলেও, গণকবরগুলো সঠিক চিহ্নিত করা না হলেও, সেই শহিদদের স্মরণে ব্যাপক আয়োজনে স্মরণসভা না হলেও গজারিয়াবাসী সেদিনের সেই নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের ঘটনা আজো ভূলতে পারেনি। গজারিয়ার গণহত্যার এ গৌরবময় ইতিহাস জাতির স্মৃতির ক্যানভাস থেকে কখনো বিস্মৃতি হবার নয়!