ঝিনাইদহ সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়ে প্রিয়াংকার হাতের মেহেদি রং না শুকাতেই আত্মহত্যা
স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহ Channel 4TV :
সন্তান হারা এক পিতার আকুতি; আর যেন কেউ তার মত প্রবাসী পাত্রের সাথে মেয়ে বিয়ে না দেয়। মেয়ের অধিক সুখের আশায় যে ভুলটি করেছি সেই ভুল যেন আর কেউ না করে। সন্তান হারানোর শোকে মর্মস্পর্শী আদরের কন্যা হারানোর বেদনায় বার বার মুর্ছা যাওয়া পিতা এমনই প্রলাপ করছিল। মা হতে পারবে না বলে অপবাদ দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন আমেরিকা প্রবাসির স্ত্রী প্রিয়ংকা বিশ্বাস (২২)। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মকর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ কুমার বিশ^াসের মেয়ে।
এ ঘটনায় পুলিশ প্রিয়ংকার শ্বশুর প্রমান্ত কুমার দত্ত ও শ্বাশুড়ি কনিকা রাণীকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করার অভিযোগ মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৯ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুরে। প্রিয়াংকা বিশ^াসের বাবা বিকাশ কুমার বিশ^াস জানান, তার দুই মেয়ে আর এক ছেলে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে তার বড় মেয়ে প্রিয়াংকা বিশ^াসের বিয়ে দেন
বগুড়া শহরের বেনিকুন্ডু লেনের কাটনারপাড়া এলাকার প্রশান্ত কুমার দত্তর পুত্র কাজল দত্তের সঙ্গে। কাজল আমেরিকা প্রবাসি। তিনি জানান, বিয়ের আগে পরে তিন দফায় ছেলের মায়ের একাউন্টে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের মন ভরেনি। মা হতে পারবে না এই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের কাছে আরো টাকা চাওয়া হতো। টাকা না পেয়ে তারা মেয়ে প্রিয়াংকার উপর নির্যাতন করতো। নির্যাতনের মাত্র বেড়ে গেলে মেয়ে শশুর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে।
বিকাশ বিশ^াস আরো জানান, এরপর তারা মেয়ের নামে একটা মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দেন। কোনো প্রকার ডাক্তারী পরীক্ষা ছাড়াই প্রচার করে প্রিয়াংকা কখনও মা হতে পারবে না। এই মিথ্যা প্রচারে মেয়ে একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। গত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে জামাই কাজল আমেরিকা চলে গেলে তিনি তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। জামাই কাজল দত্ত ঠিকমতো মেয়ের খোজ খবর নিতো না।
এমনকি সেও একদিন মুটোফোনে প্রিয়াংকা বলে তুমি কখনও বাবু দিতে পারবে না। তোমার সঙ্গে সংসার করে আমার কি লাভ। আমার সঙ্গে সংসার করচে চাইলে তোমার বাবাকে আরো টাকা দিতে বলো। পাশাপাশি মুটোফোনে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে কাজলের নানা কথোপকথোন কারনে প্রিয়াংকা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এই অবস্থায় মেয়ে প্রিয়াংকা মানষিক ভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে সে গত ৯ মে রাতে অনেকগুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বিষয়টি তার ছোট মেয়ে বুঝতে পেরে পরিবারের অন্যদের জানায়। তারা দ্রুত ঝিনাইদহ সদর ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ মে প্রিয়াংকা মারা যায়।
বিকাশ কুমার বিশ^াস জানান, ঘটনার পর তিনি ৫ জনকে আসামী করে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বাগুড়া থেকে আসামী কাজল দত্তের বাবা প্রমান্ত কুমার দত্ত ও মা কনিকা রাণীকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহে নিয়ে আসেন। বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছেন। প্রধান আসামী কাজল দত্ত আমেরিকার পেনসিল ভেনিয়া শহরে অবস্থান করছে। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, নারী নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, আত্মহত্যার প্ররোচনা ও আইসিটির ৫৭ ধারায় এই মামলা রজু করা হয়েছে। দুইজন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।