প্রেমের কারণে রাজপরিচয় ছাড়ছেন জাপানের রাজকন্যা
প্রেমের কারণে সিংহাসন ছেড়েছিলেন রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড। একই কারণে রাজপরিচয় হারাতে চলেছেন জাপানের রাজপরিবারের সদস্য রাজকন্যা মাকো।
জাপানের সম্রাট আকিহিতোর ২৫ বছর বয়সী নাতনী মাকো কোমুরো নামের এক যুবককে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, যার বয়সও ২৫। তিনি একটি ল ফার্মে কাজ করেন। তারা একসঙ্গেপড়ালেখা করতেন।
জাপানের রাজতান্ত্রিক আইন অনুযায়ী, যদি কোন রাজকন্যা সাধারণ কোন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে তার পরিবারের সদস্যপদ আর বহাল থাকে না। এই ঘটনা দেশটির অনুক্রমিক রাজশাসন নিয়ে চলমান সমালোচনাকে আরও জোরদার করেছে। জাপানের সম্রাট আকিহিতো এর আগে রাজশাসন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
২০১২ সালে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিস্টিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় একটি রেস্তোরাঁতে প্রথম দেখা হয় রাজকন্যা মাকো এবং কোমুরোর।
জাপানের রাজপরিবারের এক সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, ওই যুবকের সঙ্গে রাজকন্যা মাকোর বাগদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
খুব শিগগিরই এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেয়া হবে এবং বিয়ের জন্য একটি সম্ভাব্য দিনও ঠিক করা হবে। নতুন এই দম্পতি সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর সঙ্গে দেখা করবেন। উপহার এবং উপঢৌকন বিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিয়ের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে বিয়ের পর তাকে ছাড়তে হবে রাজপরিবারের পরিচয়।
বিয়ের বিষয়ে রাজকন্যার হবু বর কোমুরো সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, কথা বলার জন্য এখন উপযুক্ত সময় নয়। সঠিক সময়ে আমি এ নিয়ে কথা বলবো।
এর আগে ২০০৫ সালে রাজকন্যা মাকোর খালা সেয়াকো সর্ব প্রথম একজন সাধারণ যুবককে বিয়ে করে রাজপরিচয় বিসর্জন দিয়েছিলেন। রাজধানী টোকিও সরকারের একজন পরিকল্পনাবিদকে বিয়ে করে সেয়াকো রাজপ্রাসাদ ছেড়ে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে বাস করছেন। তিনি নিজে গাড়ি চালাতে শিখেছেন, বাজার করতে শিখেছেন। তাদের বিয়েও হয়েছিল অনেকটা অনাড়ম্বরভাবে। সেয়াকো আকিহিতোর একমাত্র কন্যা।
বয়সের কারণে দায়িত্বপালনে অসুবিধা হতে পারে এমন দাবি করে সম্প্রতি ৮৩ বছর বয়সে এসে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আকিহিতো। গত দুইশ বছরের মধ্যে জাপানের রাজতন্ত্রের ইতিহাসে কোন সম্রাট অবসরে যাননি। দেশটির প্রচলিত আইন একে সমর্থন করে না, কিন্তু বর্তমানে এই রীতির পরিবর্তনের জন্য সরকার আইন পরিবর্তনে কাজ করছে।
এই আইনের মাধ্যমে বহুবিতর্কিত অপরিবর্তনীয় একমাত্র পুরুষের উত্তরসূরী আইনও বাদ দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী জাপানের মসনদের উত্তরাধীকারীদের মধ্যে রয়েছেন চারজন। আকিহিতোর ছেলে নারুহিতো এবং ফামিহিতো, ফামিহিতোর ছেলে হাসিহিতো এবং আকিহিতোর ছোট ভাই মাসিহিতো।
রাজকন্যা মাকোর বাগদানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিতে সুগা বলেছেন, একটি স্থিতিশীল রাজতন্ত্রের পরম্বপরা এবং এর পরিবর্তনের বিষয়ে আমাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি।