লোডশেডিং সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম
গরমর তীব্রতা যেন দিনকে দিন বাড়ছেই। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। একেতো গরমে অতিষ্ঠ জীবন। আর তার উপরে লোডশেডিং যেন আরেক যন্ত্রণা। সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত মানুষ পোহাচ্ছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।
এর কারণ হিসেবে জানা গেছে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি। ফলে গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে প্রতিদিনই লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় ১০ ঘণ্টা করে। তাছাড়াও পোহাতে হচ্ছে লো-ভোল্টেজের সমস্যা।
পিডিবির সূত্র মতে গতকাল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিলো ৯ হাজার ১১৬ মেগাওয়াট। যেখানে চাহিদা ছিলো আরো বেশি।
খবর নিয়ে জানা যায় ঢাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে ৫০০ মেগাওয়াট মতো, রাজশাহী-রংপুরে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেক চাহিদা রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)। আরইবি বর্তমানে প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দিচ্ছে। বর্তমানে আরইবির গ্রাহকদের সর্বোচ্চ চাহিদা ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা অন্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি ২৭ মে নাগাদ চালু হতে পারে। আশুগঞ্জ ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র চালু হতে ২৯ মে গড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভেড়ামারা ২১৪ এবং বড়পুকুরিয়া ২১০ মেগাওয়াট কেন্দ্র চালু হতেও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। কারিগরি কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া সামিটের বিবিয়ানা ৩৪১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটিও চালু করার চেষ্টা চলছে।
সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটি শিঘ্রই চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে হাটহাজারী ১০০, সান্তাহার ৫০ প্রভৃতি কেন্দ্রও আজ-কালের মধ্যে চালু হতে পারে বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।
আরো অন্তত ৪-৫ দিন এই দুরাবস্থা চলবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এই মুহুর্তে সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি, গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়া এবং কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সারাদেশে যে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিয়েছে তা আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে অনেকটাই কেটে যাবে।
গত ১ মে কালবৈশাখীর ঝড়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার ভেঙ্গে পড়লে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এরপরেই চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের ঘাটতি এবং সঞ্চালন লাইনে ক্রটিসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক হতে পারেনি। এর মধ্যে গত ১০ দিন থেকে সারাদেশে চলছে বিদ্যুতের ভয়াবহ ঘাটতি। ফলে জনগণকে এই তীব্র গরমে পোহাতে হচ্ছে এই লোডশেডিংয়ের ঝামেলা।
বিদ্যুতের সংকট কাটাতে আরও কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে, তবে আসন্ন রমজানে বিদ্যুতের সংকট থাকলেও পরিস্থিতির অনেকগুণ উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।