পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের কাণ্ড মানসিক প্রতিবন্ধীকে ফুসলিয়ে বন্ধ্যাকরণ
মানসিক এক প্রতিবন্ধী নারীকে বন্ধ্যাকরণ (লাইগেশন) করিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীরা। কাগজ-কলমে নিজেদের দায়িত্বের পরিচয় দিতে এক অসহায় নারীকে চরম মানসিক যন্ত্রণায় ফেলেছেন। সারা জীবনের মত সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হলেও পরিবার কিংবা ওই নারী সম্মতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সংশ্লিষ্ঠরা। তাই প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী পরিবার যাচ্ছেন আদালতে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইগেশন (বন্ধ্যাকরণ) ক্যাম্পের আয়োজন করে গাংনী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এমসিএইচ ইউনিট। তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন মাঠকর্মী তহমিনা খাতুন ক্যাম্পে নিয়ে যান করমদি গ্রামের আবেদ আলীর স্ত্রী তছলিমা খাতুনকে (৪০)। অপারেশনের মাধ্যমে তার লাইগেন করিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা না করিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পেটে অপারেশনের সেলাই দেখে পরিবারে তোলপড়া শুরু হয়।
তছলিমা খাতুন গাংনী শহরের বালিকা বিদ্যালয় পাড়ার খানোয়ার হোসেন খানুর বোন। ঘটনার দিন থেকে ভাইয়ের বাড়িতে রয়েছেন তছলিমা। তার মুখ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে পরিবারে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খানোয়ার হোসেন খানু ও তার পরিবারের লোকজন বলেন, তছলিমা মানসিক প্রতিবন্ধী। নিয়মিত ওষুধ সেবনে সে কিছুটা সুস্থ্য হয়। কথাবার্তা বললেও সে প্রায় সব সময় অস্বাভাবিক থাকেন। তার পেটে টিউমার রয়েছে। দিনমজুর স্বামীর পক্ষে তার অপরেশন করানো সম্ভব নয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে মাঠকর্মী (স্বাস্থ্য সহকার) তহমিনা খাতুন। টিউমার অপারেশন করার কথা বলে তার বন্ধ্যাকরণ করিয়েছে। তার স্বামীসহ অভিভাবকদের অনুমতি নেয়া হয়নি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাই মাঠকর্মী ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী তছলিমা বলেন, তার স্বামী অন্য জেলায় দিনমজুরী করতে গেছে। টিউমার অপারেশনের কথা বলে সে (তহমিনা) আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।
তছলিমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সোহাগী খাতুন জানায়, টিউমার অপারেশন ও টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে মাকে নিয়ে যায়।
কোন নারী পুরুষের বন্ধ্যাকরণ করতে হলে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর লিখিত অনুমতি প্রয়োজন। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবারের অভিভাকদের অনুমতি নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তছলিমার ক্ষেত্রে কোন আইন মানা হয়নি। মানসিক প্রতিবন্ধীকে ফুসলিয়ে বন্ধ্যাকরণা করা হয়েছে। বিষয়টি আইনের চোখে কতটা অপরাধ ও মানবিক দিক দিয়েই বা কি? এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাঃ রফিকুল ইসলামের কাছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঠকর্মী কিভাবে নিয়ে এসেছে তা আমি জানি না। তবে আমাদের কাছে কেউ আসলে আমরা ধরে নিই যে পরিবারের সম্মতি রয়েছে। এটি আইনগতভাবে কতটা অপরাধ সে প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি। কাগজে-কলমে দায়িত্ব পালন বোঝাতে এমনটি করা হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান।