ইয়েমেনে তীব্র খাদ্য সংকট
দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইয়েমেনের যুদ্ধে লাখ লাখ অধিবাসী দিনাতিপাত করছে তীব্র খাদ্য সংকটে। এই অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র এই দেশটিতে দুর্ভিক্ষাবস্থার মধ্যেই এসেছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র রমজান মাস। যুদ্ধাবস্থায় এটা ইয়েমেনের তৃতীয় রমজান। দেশটির অধিকাংশ মানুষই ভুগছে খাদ্য ও ঔষধ সংকটে।
সাহায্য সংস্থাগুলোর মতে, ইয়েমেনের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে অভিহিত করেছে ‘বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট’ বলে।
ইয়েমেনের ২ লাখের বেশি শিশু তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন ৫ বছরের কম বয়স্ক শিশু প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে।
এছাড়াও দেশটি কলেরার মহামারী মোকাবেলা করছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজারেরও বেশি। এই মাসের শুরুতে কলেরার মহামারীতে বহু মানুষের মৃত্যু হলে ইয়েমেনের বিরোধী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
রমজানের সময় বিশেষ খাবার প্রস্তুতের কথা এখন দেশটির জনগণ ভাবতেই পারে না। প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্যই সেখানে হাহাকার।
হোদেইদাহের বাসিন্দা নাবিল ইব্রাহিম আল জাজিরাকে বলেন, আমাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমরা কয়েক বছর ধরে বেতন পাই না। প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো মেটানোও কষ্টকর। দামও খুব চড়া। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেও পারি না।
দাতব্য কর্মী সাদেক আল সায়েদী আল জাজিরাকে বলেন, হোদেইদাহের অধিবাসীরা চরম সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। রমজানের এই সময়টা তারা বেতন পায়নি, বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, আবহাওয়াও উত্তপ্ত এবং চলমান যুদ্ধের জন্য অবরোধের মধ্যে থাকতে হচ্ছে তাদের।
সাধারণত রমজান মাসজুড়ে বেচাবিক্রি ভালো হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। পশ্চিম ইয়েমেনের উপকূলীয় শহর হোদেইদাহ-এর একজন দোকানদার ইয়াহিয়া হুবার আল জাজিরাকে বলেন,“গত বছরের তুলনায় এবারের বিক্রি অনেক কম। নতুন বছর আরও খারাপ বার্তা নিয়েই আসে।”
ইয়েমেনকে সাহায্য করতে জাতিসংঘের ২.১ বিলিয়ন ইউএস ডলার প্রয়োজন। এই ‘অভূতপূর্ব মাত্রার সংকট’ মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত তার মাত্র অর্ধেক যোগাড় করতে পেরেছে তারা।
জাতিসংঘের হিসেবে হুতি যোদ্ধা এবং আরব জোটের মধ্যে এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। যা দেশটিকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়াও তা দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও ভেঙ্গে দিয়েছে। অসংখ্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বোমা ফেলা হয়েছে। এছাড়াও যুদ্ধের কারণে বাধ্য হয়েই অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন সংখ্যালঘু হুতি গ্রুপের যোদ্ধারা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর অনুসারী সৈন্যদের সাথে নিয়ে একটি জোট গঠন করে। বিপরীতে সৌদি আরবের অনুগত প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির পক্ষে এগিয়ে আসে দেশটি। সৌদি আরবের নেতৃত্বে, বিশেষ করে আরব দেশগুলোকে সাথে নিয়ে, আন্তর্জাতিক এক জোট বাহিনী হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।