প্লাস্টিক ক্রোকারিজ, খেলনা, হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকার উপর ভ্যাটের চাপ
বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট আরোপের ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। চাপ বাড়বে ভোক্তা পর্যায়ে। এক কথায় বলতে গেলে, এই বাজেট ভোক্তার বিপরীতে গেছে।
সোমবার রাজধানীর পল্টনে বিপিজিএমইএর কার্যালয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জ ও নিম্ন আয়ের মানুষ ক্রোকারিজ পণ্য, রাবারের হাওয়াই চপ্পল ও প্লাস্টিকের পাদুকা ব্যবহার করে থাকে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন হলে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে; চাপে পড়বে ভোক্তারা।
তাই এসব পণ্য ও প্লাস্টিক রি-সাইক্লিং খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল এবং প্লাস্টিক শিল্পের উৎসে কর দুই বছরের জন্য শূন্য করার দাবি জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে বিপিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক খাতের কিছু প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে প্লাস্টিক খাতের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিপুল সম্ভাবনাময় দেশীয় খেলনা শিল্পে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপের ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জের দরিদ্র মানুষ প্লাস্টিকের ক্রোকারিজ পণ্য ব্যবহার করে। এসব পণ্য উৎপাদন, সরবরাহকারী ও ভোক্তা শ্রেণি প্রত্যেকেই নিম্ন আয়ের অতি দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। ভ্যাটের হিসাব সংরক্ষণের জন্য ইসিআর মেশিন ব্যবহারের দক্ষতাও তাদের নেই। এই শিল্পে মূসক নেওয়া হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়ে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশি নিম্নমানের পণ্য দেশে সয়লাব ও দেশীয় শিল্প ধ্বংস হবে।
রি-সাইক্লিং খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করে বিপিজিএমইএ’র লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্লাস্টিক রি-সাইক্লিং এখনও ডেভেলপ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপরও টোকাই, ভাঙ্গারির দোকানের মাধ্যমে রাস্তার আর্বজনা থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে ৭০ শতাংশ রি-সাইক্লিং করে এই শিল্পের পণ্য তৈরি হয়। রি-সাইক্লিং পণ্যের কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ওপরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রি-সাইক্লিং থেকে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ অচেনা ও অপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ আয়ের মানুষের ব্যবহৃত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার সরবরাহকারীকে ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহার্য প্লাস্টিক রি-সাইক্লিংয়ে মূসক ধার্য হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশীয় কাঁচামাল, মেশিন, নিজস্ব মেধা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি প্লাস্টিক ও রাবারের হাওয়াই চপ্পল ও প্লাস্টিক পাদুকায় ১২০ টাকার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাজেটে প্রত্যাহার করা হয়েছে। হাওয়াই চপ্পল, পাদুকা (জুতা, স্যান্ডেল, সোল) শ্রমজীবী ও গরীব মানুষ ব্যবহার করেন। অনুপযোগী পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও রাবারের ছেড়া জুতা, স্যান্ডেলের ফিতা ও অন্যান্য প্লাস্টিক সামগ্রী রি-সাইক্লিং করে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে এই পাদুকা তৈরি হয়। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও রাবারের রি-সাইক্লিং না হলে ড্রেন, নর্দমা ভরাট হতো; কৃষিকাজ, বৃক্ষরোপন ব্যাহত হতো।
তিনি বলেন, আগে খেলনা জাতীয় পণ্য আমদানি নির্ভর ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশে উৎপাদিত খেলনা পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে স্বল্পহারে রপ্তানি হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে খেলনা শিল্পে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের নিম্নমানের পণ্য বাংলাদেশের খেলনার বাজার দখল করতে পারে।
এছাড়া ক্রোকারিজ পণ্যে নতুন ভ্যাট আইনে মূসক অব্যাহতি আরও ৫ বছর বহাল রাখা, প্লাস্টিক শিল্প সুরক্ষায় পোশাক খাতের মতো কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, ভ্যাটমুক্ত টার্নওভার সীমা ৫ কোটি টাকা নির্ধারণ, টার্নওভার কর ৩ শতাংশ করা, ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন মো. জসিম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ, এ.এস.এম. কামাল উদ্দিন, ফেরদেৌস ওয়াহিদ, শাহেদুল ইসলাম হেলাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মো. গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।