বাবার কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সত্বেও ঢাকা- চা বিক্রি করছে ছেলে!
ছনি চৌধুরী,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি Channel 4TV :
পিতাহারা এক সন্তানের সম্পত্তি গ্রাস করতে প্রভাবশালী ২ সৎ ভাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মুরুব্বিয়ান সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সরনাপন্ন হয়েও কোন বিচার না পেয়ে অবশেষে স্থানীয় গ্রাম- আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পিতাহারা অসহায় হাছান চৌধুরী। বাবার রেখে যাওয়া কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সত্বেও ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের পাশে চা বিক্রি করতে হচ্ছে!..। এমন লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২নং ফরমে [৯ (১) বিধি] মোতাবেক প্রতিবাদীর প্রতি ২বার সমান করার পরেও বাদী পক্ষকে না পাওয়ায় অবশেষে পূণরায় গত এপ্রিল মাসের ১২ তারিখে আরেকটি সমন নোটিশ পাঠানো হয়। এর পরও বাদী পক্ষকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামে। এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের সূত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বেতাপুর গ্রামের মৃত আইয়ূব মিয়া চৌধুরীর পুত্র লেবু মিয়া চৌধুরী প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত ২৫ বছর পূর্বে একই ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত মন্নান মিয়ার প্রথমা কন্যা সেবি বেগমকে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় যার নাম হাছান চৌধুরী। এর পূর্বে লেবু মিয়া ১ম বিয়ে করেন নবীগঞ্জের ঘোলডুবা গ্রামের সৈয়দা নূরেহা বেগমকে। ২য় স্ত্রীর গর্ভে পুত্র জন্মের খবর নিয়ে প্রথম স্ত্রী সৈয়দা নুরেহা বেগমের কাছে সিলেট রায়নগরস্থ একটি বাসায় চলে যান। লেবু মিয়ার বড় স্ত্রী ও অন্যান্য সন্তানাধীরা এ পুত্র সন্তান হওয়ার খবরে দুঃচিন্তায় পড়ে এবং কিছুতেই মানতে রাজি নয়। এমনকি লেবু মিয়াকে সাথে সাথে হুমকি ধামকি দিয়ে বলে তাদের সাথে কোন সর্ম্পক না রাখতে। অন্যতায় এখানে আসতে পারবে না। এর পরও লেবু মিয়া তার ২য় স্ত্রী ও তার সন্তান হাছানকে কোন ভাবেই ছেড়ে যানন নি। তাদের যাবতিয় খরচ তিনি বহন করেন। কিছুদিন পর তিনি আমেরিকা চলে যান। সেখানে বছর খানেক থাকার পর নাড়ির টানে আবার স্ত্রী সন্তানদের জন্য প্রয়োজনী জিনিস পত্র নিয়ে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করতেন। এবং গত ২০১৪ইং সনে লেবু মিয়া চৌধুরী বাড়িতে আসেন। আসার পর সিলেট রায়নগরস্থ বাসা ও গ্রামের বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। এর মধ্যে তিনি সিলেট বাসায় থাকা অবস্থায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য সিলেট সোবহানী ঘাট একটি হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে ব্রেইনষ্ট্রোক করে মারা যান বলে গ্রামের বাড়িতে খবর আসে। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে লেবু মিয়ার ২য় স্ত্রী ও পুত্র হাছান তার বাবার বাড়ি, সৎ, মা- ভাই, বোনদের কাছে বারবার গেলেও কেউ কোন সাহায্য সহযোগীতা করেন নি। বরং উল্টো তাদেরকে নানান অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। হাছান চৌধুরী মা সেবী বেগম তার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন স্থানে বাসাবাড়ি ভাড়া করে খুব কষ্ট করে অল্প লেখা- পড়া করিয়ে বড় করেন। এবং এক পর্যায়ে হাছান চৌধুরী যুবক হয়ে যখন বুঝতে পারে তার পরিবারের অভাব অনটন ও আর্থিক সমস্যার কথা। ঠিক তখনই সে নিজের পায়ে দাড়াবার পথ অবলম্বন করে। এবং ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দি সিএনজি গ্যাস পাম্প সংলগ্ন ডাঃ মুজিব মিয়ার বাসার ২য় তলা ভাড়া নিয়ে তার মা-কে নিয়ে বসবাস করছে। এবং হাইওয়ে রাস্তা সংলগ্ন একটি চা- ষ্টল দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। ২০ বছরের যুবক হাছান চৌধুরী যখন তার বাবার রেখে যাওয়া সহায় সম্পত্তির কাগজ পত্র সংগ্রহ করে দেখতে পায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি তিনি রেখে গেছেন। এর মধ্যে অনেক মূল্যবান জায়গা বিক্রিও করেছে হাছানের অজান্তে। এসব কথা যখন সে জানতে পারে, তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! যেখানে হাছান চৌধুরীর বাবার বাড়ি, বাসা ও বিভিন্ন সম্পত্তিতে অন্যান্য লোকজন বসবাস করছেন আর এখানে হাছান চৌধুরী অন্যের বাসায় তার মাকে নিয়ে বাসাভাড়া করে বসবাস করছে। জীবন মরনের সন্নিকটে মহা সড়কের পার্শে জীবিকার তাগিদে চা- স্টল দিয়ে ব্যবসা করে দিন কাটাচ্ছে! অপরদিকে সৎ ভাই হুমায়ুন চৌধুরী ও আলমগীর চৌধুরী তার বাবার সকল সম্পত্তি আত্মসাত করে খাচ্ছে! নিরুপায় হয়ে স্থানীয় আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজের কাজ হচ্ছেনা! এ ব্যাপারে মৃত লেবু মিয়ার স্ত্রী সেবী বেগম এর সাথে আলাপকালে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। তার বাবার বড় ইচ্ছা ছিল হাছানকে লেখা পড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার আর লেখা- পড়া করা হলো না। আমি আমার সন্তানকে খুব কষ্ট করে লালন পালন করে বড় করেছি। সে এখন বড় হয়েছে, তার বাবার সম্পত্তির কথা আমাকে বার বার জিঙ্গেস করছে। কিন্তু আমিতো কিছুই বলতে পারিনা। আমার ছেলের কাছে আমি লজ্জিত বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ ব্যাপারে চা-স্টল ব্যবসায়ী হাছান চৌধুরী সাথে কথা হলে সে জানায়, তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার মা খুব কষ্ট করে তাকে বড় করেছেন। তাই সে আরো বলে, আমি এখন বুঝতে শিখেছি। আমার বাবা লেবু মিয়া চৌধুরী মৃত্যুর পূর্বে অনেক সহায় সম্পত্তি রেখে গেছেন। আমি সব কাগজপত্র এনে রেখেছি। এই দেখুন সাংবাদিক ভাই। সে আরো জানায় তার সৎ ভাই হুমায়ুন চৌধুরী ও আলমগীর চৌধুরী তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার অজান্তে বিক্রি করছে। এমনকি তাকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করছে। হাছান তার বাবার সম্পত্তি ফিরে পেতে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু- দৃষ্টি কামনা করছে। এ ব্যাপারে আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মুহিবুর রহমান হারুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে আসামীর পক্ষে ৩বার নোটিশ করেও বাদী পক্ষকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।