মুন্সীগঞ্জের মাঠে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি Channel 4TV :
শনিবার নানাভাবে বিভক্ত হয়ে ভোটের মাঠে নামতে শুরু করেছেন মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আবার ব্যক্তিকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জেলার তিন সংসদ সদস্যকে ঘিরেই মূলত এই গ্রুপের সৃষ্টি। স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগও শীর্ষ নেতাদের খবরদারিতেই চলছে। শ্রীনগর উপজেলায় উপজেলা ও শ্রীনগর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ এবং গজারিয়া উপজেলায় রয়েছে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কমিটি। যদিও জেলা ছাত্রলীগ ওইসবউপজেলায় একটি করে কমিটিই অনুমোদন দিয়েছেন। সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই গ্রুপে বিভক্ত। সভাপতি ফয়সাল মৃধার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। থানায় মামলা রয়েছে একাধিক। গত কয়েকদিন আগে ওইসব মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে। এরপর জামিনে মুক্ত হয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাবেল স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদকের বলয়ে থেকেকাজ করছেন। দলীয় কোন্দল প্রকট হলেও আগের চেয়ে মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে ছুটছেন। আলাদাভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।২০০৮ সালের পর মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াতে শুরুকরেছে। আবার বিএনপি-জামায়াত জোটেরও অনেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গ নিচ্ছেন। এদিকে, মুন্সীগঞ্জের কোনো কোনো আসনে এবার দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দলীয় সংকেতপেয়ে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ইদ্রিস আলী স্থানীয়রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছেন। ক্লিন ইমেজের এ নেতা ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ওই সময়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ সদর-গজারিয়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর অশান্ত চরাঞ্চলের পরিবেশকে শান্ত করেছিলেন। দলীয় সন্ত্রাসীদেরও ঠাঁই মেলেনি তার কাছে। তার দাবি, আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থী হতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এছাড়া, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনেরেখে মুন্সীগঞ্জ-২ নির্বাচনী (টঙ্গীবাড়ী- লৌহজং) এলাকায় কাজ শুরু করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। তিনি টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্যরা তো প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন এক নম্বরে।স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সদর ও গজারিয়া মিলে মুন্সীগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকা। এখানে জেলাআওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগকেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এই আসনে বিগত নির্বাচনগুলোতে জেলা আওয়ামী লীগ দলীয় টিকিট পেয়ে নির্বাচন করতেন। একক ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় তারা অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসকে মানতে পারছেন না বলে মৃণাল সমর্থকদেরঅভিযোগ। এর আগে এ পরিবারটি সাবেক সংসদ সদস্য এম ইদ্রিস আলীকেও মেনে নিতে পারেননি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর অ্যাডভোকেট মৃণালকান্তি দাস কাজ করে যথাসাধ্য উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকায়।টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণভারে রয়েছেন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক ফকির মো. আব্দুল হামিদকে কোণঠাসা করে রেখেছেন সংসদ সদস্য এমিলি গ্রুপ। এই উপজেলার একক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছেন সংসদ সদস্য এমিলি সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ সিকদার গ্রুপ। টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক পক্ষে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান ও উপজেলাচেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ। অপর পক্ষে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জগলুল হালদার ভুতু এবং সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল-আসাদ বারেক। শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একক ক্ষমতাধর হচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। এখানকার দুইটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ভয়াবহ কোন্দল ও সহিংস-রক্তপাতে জড়িত। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিরাজদিখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সোহরাবসহ আরো কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান দিয়ে রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন।জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাবেল জানিয়েছেন, ছাত্রলীগে কোথাও কোনো গ্রুপিং নেই। সংসদ সদস্যের পক্ষে থাকলেও মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার বাইরে গিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল মৃধা যদি চান, তাহলে মহিউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে গ্রুপ করুক।এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।ছাত্রলীগ, যুবলীগ আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠননয়। নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সেন্ট্রাল কমিটি।ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করলে জেলা আওয়ামী লীগ কাউকে বহিষ্কার করতে পারবে না মর্মে কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে। গেল ইউপি নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহীর সংখ্যা ছিল