শ্রীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রমের ব্যবহার বাড়ছে
টি.আই সানি,গাজীপুর Channel 4TV :
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে সমূহে শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। লেদ, ওয়েল্ডিং, নির্মাণকাজ, যানবাহনের সহকারী সহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
জীবিকার তাগিদে পরিবারের ইচ্ছায় শিশুরা এসব কাজে যুক্ত হচ্ছে। আবার কম পারিশ্রমিকে শিশুদের কাজ করানোর কারণে উদ্যোক্তারা শিশুদের এসব কাজে নিয়োগ করছে। এসব কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রায় পুরো অংশ দেশের অন্যান্য জেলাসমূহের বাসিন্দা।
সরেজমিন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে। শ্রীপুর পৌর শহরের রেলস্টেশনের আশপাশে গড়ে উঠা কয়েকটি ওয়ার্কশপে কয়েকজন শিশু ঝূঁকিপূর্ণ এসব কাজ করতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান (১৫) নামে একজন জানান, মাদারীপুর থেকে মা বাবাসহ বরমী ইউনিয়নের খলারটেক এলাকার বেশ কয়েকবছর যাবত বসবাস করছেন। ৬ সদস্যের পরিবারে বাবা ও তাকে ছাড়া উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। পড়াশুনা করে প্রাথমিকের স্তর অতিক্রম করতে পারেনি। মা বাবার নির্দেশেই জীবিকার তাগিদে তাকে এ পেশায় কাজ করতে হচ্ছে।
স্টেশন এলাকার একজন উদ্যোক্তা রুস্তম আলী জানান, শিশুদেকে আমরা নিয়োগ করতে চাই না। কিন্তু শিশুদের অভিভাবকেরা বিভিন্ন লোকদের মাধ্যমে সুপারিশ করে অনেকটা জোর করেই আমাদের কারখানা গুলোতে কাজ দেয়ার অনুরোধ করে। মানবিক কারণেই অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদেরকে নিয়োগ না দিয়ে উপায় থাকে না। তবে তার এখানে কোনো শিশু শ্রমিক এখন নেই বলে দাবী তার।
শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজারে বেশ কয়েকটি ওয়েল্ডিং কারখানা রয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে, ঝালাইয়ের কাজে শিশুরা কাজ করছে। বগুড়া থেকে আসা হেলাল উদ্দিনের চেলে মমিন মিয়া (১৪) জানান, বাসা ভাড়া, দৈনন্দিন খাওয়া পড়ার খরচ মেটাতে তার মা বাবাসহ সেও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। তার মা স্থানীয় একটি পোষাক কারখানার শ্রমিক ও বাবা দিনমজুর। পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের।
জয়পুরহাটের আমিনুল ইসলামের ছেলে রাজু (১৩) জানান, তার মা বাবাসহ গত কয়েক বছর যাবত শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন। তাদের পরিবারে স্কুল পড়ুয়া কোনো শিশু নেই। সবাই কোনো না কোনো কাজে জড়িত। স্বাচ্ছন্দ্য জীবিকার জন্য সেও এখন লেদ মেশিনের শ্রমিক।
একই এলাকার ওয়েল্ডিং কারখানার হেলাল উদ্দিনের ছেলে অপর শ্রমিক রোহান মিয়া (১৬) জানায়, তার মা বাবা সুপারিশ করে স্থানীয় রানা ইঞ্জিনিয়ারিং হাউজ নামের একটি ওয়ার্কশপে তাকে ভর্তি করে। কাজ শিখার জন্য সে এ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে সে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এরকম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলবে।
রানা ইঞ্জিনিয়ারিং হাউজের উদ্যোক্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, জোর করে বা ডেকে এনে কোনো শিশু শ্রমিক তারা নিয়োগ দেন না। বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে সুপারিশ করে কাজ শিখতে তারা এসে ভর্তি হয়। এসব শিশুদের বেশিরভাগ আসে বাইরের জেলা সমূহ থেকে।
মাওনা চৌরাস্তা এস কিউ সেলসিয়াস লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানীমুখী কোনো পোষাক কারখানায় এখন আর শিশু শ্রমিক নেই। শিশু শ্রমিক থাকলে বায়াররা অর্ডার বন্ধ রাখে, ফলে শিপমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া শিশু শ্রম আইন কার্যকরের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় না।
তিনি দাবী করেন, এসব শিল্পে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের চেয়ে বাইরের ক্ষুদ্র ওয়েল্ডিং, নির্মাণ এবং লেদ কারখানার কাজগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব জায়গাতে শিশু আইন বাস্তবায়ন জরুরী।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বয়ষ্ক শিশুদের জরিপের হিসাব তার কাছে নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান, কত সংখ্যক শিশু শ্রমের সাথে জড়িত এরকম হিসেবে তাদের কাছে নেই। তবে ঝড়ে পড়ার সংখ্যা রয়েছে। শ্রীপুর উপজেলায় ঝড়ে পড়ার সংখ্যা একেবারেই কম। বাইরের জেলাসমূহ থেকে কোনো শিশু এই এলাকায় এসে শিশু শ্রমের সাথে যুক্ত হলে তা আমাদের হিসেবে নেই।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: মামুনুর রহমান জানান, ওয়েল্ডিং কারখানার আলোকরশ্মি ক্ষতিকর। অধিক মাত্রায় আলোর বিচ্ছুরণ এক পর্যায়ে শিশুকে অন্ধ করে দিতে পারে। নিয়মিত কাজ করার ফলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সিমেন্ট হাতে পায়ে লেগে ফুসকা পড়া বা ঘা হতে পারে। যদি সিমেন্টের উপাদান নাকে মুখে লাগে তবে তা মানবদেহে প্রবেশ করে সিলিকোসিড জাতীয় রোগের সৃষ্টি করে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম বলেন, শিশু শ্রমের ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা তপছিলভুক্ত নয়। এটি মূলত শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়। শ্রম মন্ত্রণালয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তা চাইলে সে ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়।