মুন্সীগঞ্জে লৌহজংে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে অসহায় ভ্রাম্যমাণ আদালতও
রুবেল মাদবর মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি Channel 4TV :
ঈদে ঘরমুখো মানুষ পদ্মা পাড়ি দিতে ভিড় জমিয়েছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে। সময় বাঁচাতে অনেকে বেছে নিয়েছেন এ নৌরুটে চলাচলরত স্পিডবোটকে।
রবিবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার শত শত যাত্রী শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা পারাপার হয়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। আর এ সুযোগে প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়ার স্থলে স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েকজনকে জরিমানা করে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ দিলেও মানছেন না তারা। ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পরপরই বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন স্পিডবোট মালিকরা।স্পিডবোটগুলোর অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা হলেও মানছে না অধিকাংশ স্পিডবোট। কিছু কিছু স্পিডবোটে পুরনো লাইফ জ্যাকেট থাকলেও যাত্রীদের জন্য তা অপর্যাপ্ত। শিশুদেরও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পদ্মা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। নাড়ির টানে এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ।লৌহজং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিমুলিয়া প্রান্তের স্পিডবোট ঘাট এলাকায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় জনপ্রতি ১২০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করতে দেখে দুই টিকিট বিক্রেতাকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এরপর প্রশাসনের নির্ধারিত ১২০ টাকা ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঘাট এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনির হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম ঘাট এলাকা ত্যাগ করার পরপরই সেই আগের অবস্থা। যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। দ্রুত বাড়ি ফেরার আশায় বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী-মাঝিকান্দি নৌরুটে তিন শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। সেগুলো বড়, মাঝারি ও ছোট এই তিন ধরনের। এর মধ্যে দেড় শতাধিক স্পিডবোটের মালিক মুন্সিগঞ্জের লৌহজং
এলাকার এবং বাকিগুলোর মালিক মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি, কাঁঠালবাড়ী ও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি এলাকার।
ঘাটের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় স্পিডবোট ২০ জন ধারণক্ষমতা হলেও যাত্রী নিচ্ছে ২৮ জন, ১৫ জন ধারণক্ষমতার মাঝারি স্পিডবোটে নেওয়া হচ্ছে ২২ জন এবং ছোট স্পিডবোটের ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০ জনের স্থলে পারাপার হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ জন। ঝুঁকি নিয়ে শিশু যাত্রী নিয়েও স্পিডবোট দিয়ে পদ্মা পারাপার হচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা।
শফিকুল ইসলামসহ একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা Channel 4TV কে জানান, স্পিডবোটগুলোতে লাইফ জ্যাকেটের স্বল্পতা রয়েছে। আর যা আছে, তাও পুরনো, ছেঁড়া ও নোংরা। তাই ঝুঁকি থাকলেও যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরতে অনীহা।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে ইউএনও মো. মনির হোসেন গতকাল বিকেলে Channel 4TV কে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম যতক্ষণ সেখানে ছিল, ততক্ষণ ১২০ টাকা করেই স্পিডবোটের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শিমুলিয়া স্পিডবোট ঘাট পরিচালনায় থাকা ডিজিটাল মাতিন Channel 4TV কে বলেন, সব নিয়ম মেনেই তারা স্পিডবোট চালাচ্ছেন। লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হলেও যাত্রীরা তা পরেন না। এ ছাড়া স্পিডবোটের নির্ধারিত আসন ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয় না বলেও জানান তিনি। একই কথা বললেন বিআইডবি্লউটিএর শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন।