জল আর জলের গন্ধে সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ে হাসি-কান্নার ঈদ উৎযাপন
জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জের হাওরপাড় থেকে Channel 4TV :
জল আর জলের গন্ধ আজন্ম সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে। জীবনের প্রতিটি মুর্হুতে মিশে থাকে জল। সেই জলেই তাদের জীবনে এবার তাদের চোখের জলের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। জলেই একাকার হয়েছে আছে হাওর পাড়ের হাজার হাজার কৃষকের বোরো ধানের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির চারপাশও। অকাল বন্যায় একমাত্র বোরো ধান হারিয়ে হাওর জুড়েই হাহাকার দু-মোটো খাবার যোগার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য করতে হচ্ছে নিরন্তর সংগ্রাম। এই দূ-সময়ে খুশির ঈদ হাওরবাসীর কান্নার ঈদ আনন্দ হয়ে এসেছে হাওর পাড়ে আরো চরম কষ্টের কারন হয়ে। অনেক পরিবার তাদের ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড় কিনে দিতে পারে নি। পারে নি প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতে অভাবের তাড়নায়। সত কষ্টের মাঝেই এই সংগ্রামী হাওরবাসী সকল কষ্ট ভুলে সম্মিলিত ভাবেই হাওর পাড়েই ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত পড়েছে। নামাজ শেষে একে অন্যের সাথে আনন্দ ভাগাভাগী করা চেষ্টা করছে। হাজারো কৃষক পরিবার কষ্ট ভুলে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে চেষ্টা করলেও জীবন বাচাঁর একমাত্র বোরো ধান হারিয়ে মনের ভিতরে রয়েছে বুকবড়া চাপাকষ্ট। হাওর মানের মাছ কিন্তু হাওরেই এবার নেই মাছ নেই। বোরো ধান হারানোর পর মাছ মরক দেখা দেওয়ায় এই সময়ে জীবিকা নির্বাহ করার অন্যান্য বছর সুযোগ থাকলের এবার হাওরে মাছ না থাকায়। ফলে জীবন দূর্বিসহ হয়েছে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না থাকায়। হাওর মানেই ভাটিয়ালী গান ডোল,নৌকার ঢেউয়ের তালে একতার সুরের সম্মিলন। এসবের মাঝেই লুকিয়ে আছে হাওরবাসীর সুখ,দুখ হাসি কান্না বিপুল সম্ভাবনা। হাওর মানের নানা প্রতিকুলতায় জীবন সংগ্রামে ঠিকে থাকা পরিশ্রমী সাধরন,সরল মানুষের জীবনের অসাধারন প্রতিছবি। সেই হাওরেই বসবাস করেছিল মিশে ছিল এই হাওরপাড়ের সাধারন মানুষের সাথে অসাধরন কিছু মানুষ। যাদের রক্তে মিশে ছিল প্রতিবাদ ও বেচেঁ থাকার অনুপ্রেরনা ডোল,তবলা,বাশিঁর সুরে কাল জয়ীগান। হাওরপাড়েই জন্ম হাছন রাজা,রাধারমন,শাহ আব্দুল করিমের তাদের পদপারনা গানে গানে মাতিয়েছিল সমগ্র হাওর পাড়ের জনমানুষকে। তাদের মত নামিদামী ও গুনী মানুষের তুলনাহীন গান ও বাউলের গান শুনে হাওরবাসী যেন প্রতি মুর্হুতে হাওরপাড়ের সব বয়সের জনসাধারন সংগ্রামী হয়ে উঠে। সেই গানের মাঝে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরনা পায় অসহায় হাওরবাসীর। এই ঈদে এবার নেই হাওরপাড়ে তাদের তুলনাহীন কালজয়ী গান গুলো মাইক কিংবা স্থানীয় শিল্পীদের কণ্ঠে শুনে ঈদ উদযাপন করার আয়োজন। সব কিছুতেই নিরাবতা বিরাজ করছে। হাওর পাড়ে দেখা যায় নি তেমন কোন উৎসাহ উদ্দিপনা। এবার জেলার দিরাই,শাল্লা,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,জামালগঞ্জ,দোয়ারা বাজার,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাওর গুলোতে স্বরনকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষক পরিবার গুলো। এদিকে সরকারী ফেয়ার প্রাইজ,টিসিবির পন্য বন্ধ,ভিজিএফ কার্ডে অনিয়ম ও ওএমএস চাল সঠিক ভাবে পায় নি হাওরবাসী। এ অবস্থায় নিজের ও পরিবারের জন্য দু-মুটো খাবার জোগার করা দায় হয়ে পরেছে। বেশির ভাগ হাওরবাসী অর্ধহারে,অনাহারে,অভাব-অনটন কে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে জীবন পার করছে। জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাযায়-অকালে এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ের যাওয়ায় জেলা ও উপজেলার বাজার সহ প্রতিটি বাজারেই চালের দোকান গুলোতে চাল নেই। অনেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করছে দোকানীরা। হাওর ডুবে যাওয়ার পর থেকে সরকারী সহযোগীতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোতে টাকার অভাবে অনেকেই বাজার-সদাই করতেও পারছে না। ফসলহারা মানুষ গুলোর এখন দিন কাটতে ভিজিএফ কার্ড ও খোলা বাজারে কম মূলে চালের আশায়। দূর-দূরান্ত থেকে চাল নিতে আসা মানুষজন সকাল থেকে সারাদিন লাইনে দাড়িয়ে ডিলারদের কাছ থেকে পাচ্ছে না। তাহিরপুরের সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,শফিুকুল ইসলাম,জমির উদ্দিন,সাজন মিয়া, করিম সহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানান,কি কইমু ভাই এবার বোরো ধান হারিয়ে এক বারেই নিঃশ্ব হয়ে গেছি। হাতে টাকা না থাকায় পোলা মাইয়ারে নতুন কাপড় কিনা দিতা পারি নাই আর জীবন কেমনে চালাইমু বুজতা পারতাছিনা। সরকার যে সহযোগীতা করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শুনি সরকার নাকি হাওর উন্নয়নের লাগি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা,মিল-কলখারকানা,বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ব্যাপারে উদাসীন কেরে। আমরার অভাব অনটন লাইগাই আছে বোরো ধান চাষ ছাড়া অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা না থাকায়। আমরা হাওরপাড়ের মানুষগুলোর ৬মাস হাওরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করি কিন্তু হাওরে এখন মাছ নাই। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান-শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনী ও যুগপযুগী পদক্ষেপের মাধ্যমে অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন গঠাতে সক্ষম হবে। না হলে এই অসহায় হাওরবাসীর দুঃখের শেষ থাকবে না। গুরুত্ব সহকারে হাওরবাসীর দিকে সু-দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রদক্ষেপ নেবার দাবী জানাই।