রাস্তার খবর নেই, সেতু নির্মাণ প্রায় শেষ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি Channel 4TV :
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের নালজোড়া এলাকায় একটি খালের ওপর ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও, সেখানে উপযোগী কোন রাস্তা নেই। সেতুর আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে তেমন কোন জনবসতি নেই, রয়েছে শুধুই কৃষি জমি।
স্থানীয় বাসিন্দা খালেকুজ্জামান জানান, সেতুটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও তা এলাকাসী উপকার পাবে না। এখানকার ফসলি জমিতে কৃষকরা শুধু চাষাবাদ করে। খালের ওই পাড়ে মানুষের যাতায়াতও কম থাকায় সেতুটি গুরুত্ব হারাচ্ছে। সেতুর পাশেই একটি পাথরের খোদাই করে লেখা রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প,কর্মসূচী ২০১৬/১৭, প্রকল্পের নাম: শ্রীপুর বরমী বাজারের পার্শ্বে নলজোড়া খালের উপর সেতু নির্মাণ কাজ, ৪০ফুট দীর্ঘ, চ’ড়ান্ত ব্যয় ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান: মেসার্স আনিকা এন্টারপ্রাইজ প্রোপ্রাইটার আইন উদ্দিন তালুকদার।
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে কেন্দুয়া ব্রীজ হয়ে প্রবেশ করলেই বাজারের প্রধান সড়ক ধরে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য আবুল হাসেমের বাড়ির পেছনের পতিত কৃষিজমির আইল ধরে এগুলেই ব্রীজের অবস্থান। সেতুটির লাগোয়া অবস্থানে রয়েছে আরেকটি সাবমার্জড ওয়্যার নামক রাবার ড্যাম। এই রাবার ড্যামের উপর দিয়ে স্থানীয় কৃষক খালের এপার-ওপার অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারতো। সড়কবিহীন সেতু ও রাবার ড্যাম সংলগ্ন ঠিক ৫’শ গজ দূরে নালজোড়া খালের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সড়কসহ আরেকটি সেতু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দু’পাশেই পায়ে চলাচলের জন্য খেতের সমতলে একটি সরু রাস্তা (আইল) রয়েছে। আর কৃষি জমির আইল ধরেই ওই সেতু ব্যবহার করতে হবে। বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টি হলেই ধান ক্ষেতসহ ওই আইলটি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় সেতুকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখা গেলেও রাস্তার অবস্থান বুঝার উপায় থাকে না। সুধীজনের অভিযোগ, উঁচু করে রাস্তা নির্মাণ না করে শুধু ব্রীজ নির্মাণ হলো পরিকল্পনাবিহীন একটি কর্ম।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১২-১৩ সালেও কৃষকের সেচের পানি রক্ষায় এখানে রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে আশপাশের এলাকার লোকজন রাবার ড্যামের উপর দিয়েই যাতায়াত করতো। নতুন সেতুটি নির্মাণের সময় রাবার ড্যামের একটি পাশ থেকে মাটি কেটে নেয়ায় তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। রাস্তা নির্মাণ ছাড়াই নতুন সেতু নির্মাণ করার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।
স্থানীয় সোহাগ মিয়া বলেন, রাস্তা নির্মাণ না করার ফলে সেতুটি জনস্বার্থে কোন কাজে আসছে না।এ স্থানটি খুব জনগুরুত্বপূর্ণ নয়, আর জনসাধারণ ওই এলাকা দিয়ে তেমন চলাচলও করে না। এ ব্রীজটির প্রায় ৩’শগজ পশ্চিমে রাস্তাসহ আরেকটি ব্রীজ রয়েছে। ওই ব্রীজ ও রাস্তাটিই এলাকাবাসী বেশি ব্যবহার করে থাকে।
তাছাড়া এই সেতুতে নির্মাণের সময় কোন পাইলিং দেয়া হয়নি। এর নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময় বিকল্পভাবে চলাচলের জন্য বাঁশ-কাঠের তৈরী একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এসব কাজে টাকা খরচ না করে তা তারা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জালাল আহমেদ বলেন, ব্রীজটির নির্মাণ কাজ প্রায় ৮০শতাংশ শেষ হয়েছে। ব্রীজের আগেই রাস্তার কাজও শুরু হওয়ার কথা, উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে এর টেন্ডারও হয়েছে। কিন্তু এখনও কেন রাস্তার কাজ শুরু হয়নি সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ব্রীজের টেন্ডারে পাইলিং করার কথা উল্লেখ না থাকায় তা করা হয়নি। এ প্রকল্পের কোন টাকা হাতিয়ে না কথা অস্বীকার করেন তিনি।
তবে শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুজায়েত হোসেন জানান, রাস্তা নির্মাণে তাদের অফিস থেকে এখন পর্যন্ত কোন টেন্ডার হয়নি। তবে বৃহত্তর ঢাকা প্রকল্প-৩-তে তালিকাভুক্তির হওয়ার কথা শুনেছি।