কেন প্রথম হতেই হবে?
জীবনে সাফল্য আমরা সবাই চাই। স্কুলের গণ্ডি থেকে শুরু করে কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। কিন্তু তাই বলে জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই কি প্রথম হওয়া যায়? কথায় আছে, ব্যর্থতা না থাকলে সাফল্যের মর্ম বোঝা দায়। তাই সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাকেও বরণ করে নেওয়া ভালো। এর জন্য দরকার আপনার মানসিক প্রস্তুতি।
কেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাকে প্রথম হতে হবে?
পারিবারিক চাপ
আমাদের অনেকের পরিবারেই এমন বেশ কিছু বিধিনিষেধ থাকে। সন্তানের প্রতি তার মা-বাবা আশা করতেই পারেন। তবে সেটি যেন উচ্চাকাঙ্ক্ষা না হয়ে দাঁড়ায়। একেকটি মানুষের পরিবেশ কিংবা বেড়ে ওঠা একেক রকম। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যেক মা-বাবার উচিত কোনো কিছু আশা করা।
লোকে কী বলবে?
এই চিন্তা বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই থাকে। একটি কাজ করার সময় যতটা না নিজের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবা হয়, তার চেয়েও যেন বেশি চিন্তা হয় লোকে কী ভাববে। এর ফলে যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ নেই, সেই কাজও অনেক সময় করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের ফল আশানুরূপ হয় না।
কারও সঙ্গে তুলনা দেওয়া
এটি ব্যক্তির ওপর একধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক পরিবারেই সন্তানকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা হয়। এর ফলে সন্তানের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা কাজ করে। যা পরবর্তী ক্ষেত্রেও থেকে যায়।
মনে রাখুন
* প্রথমেই মেনে নিন, ব্যর্থতা প্রত্যেকের জীবনের একটা অংশ। সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব হয় না।
* কারও সঙ্গে নিজের তুলনা না করা। আপনার কাছের সহকর্মী হয়তো কাজে আপনার চেয়ে এগিয়ে গেছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনাকেও এই একই কাজে প্রথম হতে হবে। প্রত্যেকের লক্ষ্য ভিন্ন। তাই কারও সঙ্গে তুলনা না করে নিজের কাজটি ঠিকমতো করুন।
* পরিবারে মা-বাবারও উচিত নয় সন্তানকে কারও সঙ্গে তুলনা দেওয়া। আপনার সন্তান হয়তো কোনো একটি বিষয়ে খারাপ করছে, তার মানে এই নয় যে তার মেধা নেই। খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন যে তার অন্য কোনো বিষয়ে দক্ষতা আছে। সেই বিষয়টির প্রতি তাকে উৎসাহিত করুন।
* নিজের দুর্বলতাগুলো আগে বুঝতে শিখুন। সেগুলো ঠিক করে নিয়ে নিজেকে সংশোধন করুন।
* কোনো কাজে অতিরিক্ত চাপ না নেওয়া। এতে কিন্তু আপনার নিজেরই দক্ষতা কমে যাচ্ছে। হয়তো কাজটি আর করবার কোনো আগ্রহ থাকল না।
* এবারে ভালো ফল আসেনি? তাহলে বিষয়টা ছেড়ে দিন। পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত হন।
তাহলে শুধু প্রথম স্থানই নয়, মনে রাখুন সারিতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানও রয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর অ্যামি বাড়ৈ বলেন, ‘কোনো একটি কাজের সঙ্গে যখন প্রথম হওয়ার চিন্তা চলে আসে, তখন আসলে কাজটি করার মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়। শুধু প্রথম হওয়া কিংবা সাফল্যের জন্য নয়, বরং ভালোমতো শেখার জন্যও কাজটি করা প্রয়োজন। একজন মানুষ ব্যর্থতা থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারে। সেটি শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও।’
সমাধান
ব্যক্তির নিজের মানসিকতা
হ্যাঁ, পরিবার বা সমাজ থেকে হয়তো বিভিন্ন ধরনের চাপ আসছে, কিন্তু আপনার নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করার দায়িত্ব আপনারই। নিজের দুর্বলতাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথম হওয়ার মতো অনেক জায়গাই রয়েছে।
শুধু ভালো ফলই নয়
শুধু পরীক্ষায় বা কর্মক্ষেত্রে কৃতকার্য হওয়াই শেষ কথা নয়। কাজটি ভালোমতো শেখাই আসল। গুটিকয়েক পাঠ্যবই পড়ে ভালো ফল করার চেয়ে ভালো করে শেখা প্রয়োজন। চাকরিতে যে কাজ করছেন, সেটি ভালোমতো করার চেষ্টা করুন—সাফল্য একসময় আসবেই।