প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
বছরে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অভিবাসী বাংলাদেশীর মৃত্যু ঘটছে বিদেশের মাটিতে। এসব হতভাগ্য শ্রমিকের মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক মনে করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করেনি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে মৃতদেহ দেশে আনার পর, ময়না তদন্তের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অভিবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে আসে। যাদের অধিকাংশের বয়স মাত্র ২৫ থেকে ৪০ বছর। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এসব শ্রমিকের হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ আর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বলে সংশ্লিষ্ট দেশ ও কর্মস্থল থেকে জানানো হয়। তবে, কর্মীদের ক্ষতিপূরণ আদায় ঠেকাতেই ময়না তদন্ত রিপোর্ট চাকুরীদাতাদের অনুকূলে তৈরি করা হয় বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, 'অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেও হয়তো কাগজ কলমে সেটাকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে বলা হয়। ওখানকার মেডিকেল অথরিটি বা পুলিশের তদন্ত যে নিরপেক্ষ হয় তা কিন্তু।'
রামরুর রিসার্চ ফেলো জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, 'ময়নাতদন্তের যে রিপোর্টটা হয়, পুরোপুরি চাকরিদাতাদের ফেভারে। সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে গিয়ে যথাযথোভোবে পায় না। হাইকমিশন যেগুলো আছে তাদের চিন্তা করতে হবে যেনো ময়নাতদন্তের রিপোর্টটা সঠিকভাবে পায়।'
মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে মরদেহ দেশে আসার পর, তা পুনরায় ময়নাতদন্তের তাগিদ দিয়েছেন তারা।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, 'কিছু মরদেহের ময়নাতদন্ত হওয়া উচিৎ। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনা, কিন্তু এটা সড়ক দুর্ঘটনা থাকে না। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হয়। কিন্তু এখানে যে আইনে একটা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা আছে সেটাকে এড়ানোর জন্য হলেও কিন্তু বলা হচ্ছে যে, এটা সড়ক দুর্ঘটনা।'
সংশ্লিষ্ট দেশে যাওয়ার আগে ও পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা অনুযায়ী একজন সুস্থ কর্মীর হঠাৎ মৃত্যুর বিষয়টি এখন থেকে খতিয়ে দেখা হবে কথা জানান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ।
তিনি বলেন, 'হার্ট অ্যাটাক হয়, স্ট্রোক হয় আর এ ধরণের ঘটনাতেই আসলে আমাদের বেশি কর্মী মারা যাচ্ছে। কর্মস্থলে গিয়ে যে দুর্ঘটনা এটার সংখ্যাও খুব কম। ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তাদের মৃত্যুটা হচ্ছে। এটা ভেবে দেখার দরকার আছে। একটা স্ট্যাডিও হওয়া দরকার যে, কেনো আমাদের কর্মীরা মারা যাচ্ছে। আরো সতর্ক হওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে।'
গত কয়েক বছর ধরেই শ্রমিকের মৃত্যুহার অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।