যেমন আছে শৈলকুপা আওয়ামীলীগ ?
প্রতিনিধি ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ উপজেলা শৈলকুপা। এখানে ১৪ টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা রয়েছে। দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী রয়েছে এখানে। তারা দলের জন্য আজীবন নিবেদিত, ব্যাক্তি স্বার্থ, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করে না এসব কর্মীরা। তারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য এসবের বিপরীতে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদ নেতা-কর্মী রয়েছে, যারা দল কে ভাঙ্গিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে, হচ্ছে । এসব দালাল, সুবিধাবাদদের কথা আমরা বলছি না। বলতে চাই ঐতিহ্যবাহী এ দলটির বর্তমানের নেতাদের কর্মকান্ড নিয়ে। এখন ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামীলীগ, এখানকার এমপি আব্দুল হাইও আওয়ামীলীগের, শুধু তিনি এমপিই নন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিও শৈলকুপার এই কৃতি সন্তান, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা । জেলা আওয়ামীলীগ কে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সময়েও । হয়েছেন বারবার এমপি, কর্মীদের অকুন্ঠ সমর্থন তার প্রতি।
একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কখনোই তিনি আগ্রাসী বা হিংস্র নয় । তার বিরুদ্ধে কোন সন্ত্রাসী চরমন্থী সংগঠন কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কোন অভিযোগ নেই। শান্তি প্রিয় নেতা হিসাবে দল-মত নির্বিশেষের কাছে যথেষ্ট সুনামের অধিকারী এই নেতা। একটি বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে কারো কারো নেতৃত্বের আকাঙ্খা, হতাশা, রাগ-ক্ষোভ থাকেতই পারে। সারাদেশেই আছে এটি। শৈলকুপাতে এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে দিন শেষে ভাল-মন্দের হিসাবের খাতা নিয়ে বসলে তিনিই অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তিনিই এগিয়ে সবার থেকে। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই তারপরও বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি কখনোই আওয়ামীলীগের বাইরে যাননি, কোন ডিগবাজি দেননি। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আব্দুল হাই আজো অব্দি আছেন আওয়ামীলীগের কান্ডারী হিসাবে। দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনা বিভাগের মধ্যে এখন তিনি প্রবীন (যদিও দলের কাছে নবীন নেতা), বিচক্ষন নেতা হিসাবে বিবেচিত। সব মিলিয়ে যোগ্যতার নিরিখেই তিনি হতে পেরেছেন প্রতিমন্ত্রি, কেন্দ্র আওয়ামীলীগ তাকে যোগ্য সম্মান দিয়েছে।
যদি অন্য নেতাদের কথা বলতে হয়, সেক্ষেত্রে সংক্ষেপে বলি শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি শিকদার মোশারফ হোসেন সোনাও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা। তিনি শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, একাধিকবার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, তার মানে দলে যোগ্যতার প্রমান দিয়েই হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। ধীর-স্থির, বিচক্ষন হিসাবে পরিচিত তিনি। দলের কথা বাদ দিলেও তার রয়েছে অসংখ্য ভক্ত, সমর্থক। তারা জান-পরাণ দিয়ে তাদের এই নেতা কে ভালবাসেন, বিপদ-আপদে ছুটে আসেন, আগলে রাখেন পরম মমতায়। আওয়ামীলীগে একজন সোনা শিকদার একদিনে গড়ে ওঠেনি।
শৈলকুপা আওয়ামীলীগের আরেক প্রবীণ নেতা কাজী আশরাফুল আজম। বর্তমানে তিনি পৌরপিতা, মানে পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র । দলে তার পদবী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পৌর আওয়ামীলীগ কে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দলের বাইরেও ব্যাক্তি ইমেজে তার রয়েছে অসংখ্য সমর্থক, ভক্ত। বয়সে প্রবীণ হলেও এখনো তিনি নিয়মিত সময় দেন দলের জন্য। তার কর্মীদের বিপদ-আপদে সামনে থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। পৌরপিতা হিসাবে পৌরসভাকে, পৌরবাসীকে নানা সুযোগ-সুবিধা করে দিতে চেষ্টা করছেন। যদিও সীমাবদ্ধতা রয়েছে সরকারী অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে । কিন্তু পৌরবাসীর নানা চাহিদায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, অভিযোগও করেন। তবে মেয়র হিসাবে কাজী আশরাফুল আজম দলের পক্ষ থেকে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে চেষ্টা করে চলেছেন আরো ভাল কিছু করতে, করে দেখাতে। শৈলকুপাবাসীর কাছে এক ডাকে পরিচিত এই সংগ্রামী নেতা।
দলটির আরেক নেতা শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু । দলের মধ্যে তারুন্যের প্রতীক হয়ে যিনি হাল ধরেছেন দলটির সম্পাদক হিসাবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তার রয়েছে ভাল জনপ্রিয়তা। এই নেতাও কিন্তু একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান হিসাবে। একজন মাঠের নেতা হিসাবে, সংগ্রামী নেতা হিসাবে ইতিমধ্যে তিনি দলের কাছে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে এই নেতা মূর্তিমান আতঙ্ক। কেননা বিপদে-আপদে তার ডাকে সাড়া দেয় হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। তরুন এই নেতার হাত ধরে এগিয়ে চলছে বর্তমানের আওয়ামীলীগ।
শৈলকুপায় আওয়ামীলীগ নেতাদের এত বর্ণাঢ্য অবস্থান থাকলেও জনমনে প্রশ্ন তুলছে তা হলো, কোন পথে শৈলকুপা আওয়ামীলীগ ? এখানে আমরা দলের অন্য কোন প্রসঙ্গ সাংগঠনিক ভীত নিয়ে না আলোচনা করলেও প্রশ্ন তুলছি দলটির কার্যালয় বা অফিস প্রসঙ্গে । এই উপজেলাতে দলটির কোন অফিস বা কার্যালয় নেই ! শাখা সংগঠনগুলোর তো নেই ই, মূল দলেরও কোন অফিস, সাংগঠনিক কার্যালয় নেই ! নেই কোন সাইনবোর্ডও ! ঐতিহ্যবাহী দলটির এই হাল অবস্থা কি কাঙ্খিত, প্রত্যাশিত ? দলের নিবেদিত সেই কর্মীরা কি এটাকে সহজভাবে নিয়েছেন, নাকি নিবেন ? দলটির শাখা সংগঠন ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ এদেরই কি কোন অফিস আছে ? আছে কি কার্যালয়, সাংগঠনিক বা বসার কোন জায়গা ? এসব শাখা সংগঠনের সবগুলোরই তো কমিটি রয়েছে, আছে নেতা, পদ-পদবী ধারীরা ।
দলের সব সুযোগ-সুবিধাও তো ভোগ করছেন এরা, নয় কি ? তবে কেন শৈলকুপা উপজেলা শহরে তাদের সাইনবোর্ড, অফিস নেই ? এই যদি হয় অবস্থা তবে সে সংগঠনের অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম কতটা সচল, কতটা কল্যাণকর, কতটা গণমুখি সে প্রশ্ন কি উঠবে না ? আর দলের আলোচিত, আলোকিত যেসব নেতাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাদের নজরই বা কেন পড়ে না এদিকে ? অফিস বা সাংগঠনিক কার্যালয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কাছে আশা-ভরসার প্রতীক। বিপদ-আপদে তারা এখানে আসতে চাই, সহজেই পাশে পেতে চাই নেতাদের। সে সুযোগ কেন দেয়া হচ্ছে না নিবেদিত কর্মীদের ?