নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দিঃ খাদ্য সংকট
শাহ মো: জিয়াউর রহমান,নীলফামারী
অবিরাম বর্ষণে সৈয়দপুরের খড়খড়িয়া নদীর শহর রক্ষা বাধটি শনিবার গভীর রাতে ভেঙ্গে গেছে। এতে হু-হু শহরে ঢুকছে পানি। আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। নি¤œ আয়ের মানুষেরা পরিবার নিয়ে চড়ম দুর্দশায় পড়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন কিংবা কোন কতৃপক্ষ বন্যার্তদের পাশে না যাওয়ায় মারবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এ সকল মানুষজন।
করতোয়ার শাখা নদী হিসেবে খড়খড়িয়া নদীটি সৈয়দপুরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এ নদীটির বন্যা হতে রক্ষার জন্য শহর বাধ নির্মাণ করা হয়েছিল। যা পৌর ১১ নং ওয়ার্ডের কুন্দল এলাকার কোল্ডষ্টোর থেকে ১০ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়াড়ি পাড়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের বাধ। গত শনিবার রাতে পাটোয়াড়ী পাড়া এলাকায় ¯্রােতের তীব্রতায় এ বাধটি ৫০ মিটার বিধ্বস্ত হয়। ক্রমেই এই ভাঙ্গন বাড়ছে। ফলে ওই অংশ দিয়ে তীব্র ¯্রােতের বেগে বন্যার পানি ঢুকছে সৈয়দপুর শহরে। এ পানিতে শহরের নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। শহরের কাজিহাট, পাটোয়াড়ী পাড়া, বানিয়াপাড়া, হাজিপাড়া,টেকনিক্যাল কলেজপাড়া, হাতিখানা, নতুৃনবাবুপাড়া, বাশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, বাংগালীপুর, পুরাতনবাবুপাড়া, গোলাহাট, সরকার পাড়া ও ১৫টি অবাঙ্গালী ক্যাম্পে এবং ৫ ইউনিয়নে জলাবদ্ধতায় লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় এ সকল মানুষ কোথাও যেতে পারছেনা। কবলিতরা কাজে যেতে না পারায় পরিবার নিয়ে তাদের প্রায়ই অভুক্ত কাটাতে হচ্ছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর এলাকার রানওয়ে সংলগ্ন তেলিপাড়ায় বাধ ধ্বসে বন্যার পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হলেও এখনো নিরাপদ রয়েছে বিমানবন্দরটি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৫টি ফ্লাইড ওঠা-নামা করেছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যাবস্থাপক শাহীন আহমেদ বলেন, রানওয়ের পশ্চিমে দুই কিলোমিটার দুরে বাধটি ভাঙ্গলেও এখনো বিমানবন্দর এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেনি। তবে বন্যার পানি বিমানবন্দর সীমানা প্রাচীর ছুয়েছে। যে কোন সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে বিমানবন্দরের রানওয়ে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সর্তক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, শহরের কেন্দ্র স্থলের উচু পাড়া মহল্লার বাসা-বাড়িতে পানি না উঠলেও তলিয়ে গেছে রাস্তা ঘাট। ফলে ওই সব এলাকার মানুষও পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এ নিয়ে গত শনিবার সৈয়দপুর পৌর পরিষদ দুর্যোগ মোকবেলায় সভা করেছে। ওই দিন সন্ধায় বন্যা কবলিত ১১ নং ওয়ার্ডে খাবার বিতরণ করেছেন। তবে প্রকৃত বন্যার্তদের কেহই এ খাদ্য সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর ১১ নং ওয়ার্ডের কুন্দল শহর রক্ষা বাধ এলাকার পানিবন্দি আবুল কাশেম জানান, অব্যাহত বর্ষণে কোমর পানিতে তলিয়ে আছে পুরো এলাকা। তারই মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন রকম ওই ঘরেই বসবাস করছি। অনাহারে কাটালেও কেউ খবর নেয়নি। একই অভিযোগ বন্যা কবলিত ওই এলাকার শতাধিক পরিবারের। সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সাহায্য দরকার। তাই পরিষদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।