মুন্সীগঞ্জ জেলার সদরে স্বাস্থ্যসেবা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেনারেল হাসপাতাল ॥জনবল সংকট
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃজনবল সংকটে মুন্সীগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।সরকারী হাসপাতালগুলোতে নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কটেজেলার সরকারী হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ রোগী এবং রোগীর স্বজনদের। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নত করা হলেও জনবল রয়েছে ৫০ শয্যারই। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জনবল চাহিদা ১৩০ জন এরবিপরীতে রয়েছে ৯৯ জন । লোকবল সংকট রয়েছে ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেনীর ৩১ জনের। আর এই ৫০ শয্যার লোকবল দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলার চিকিৎসাসেবা। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতেও রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্য মতে ,জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট জনবল ১৮৯ জন এর বিপরীতে রয়েছে ১২০ জন এবং জনবল সংকট রয়েছে ৬৯ জনের। সিরাজদিখান উপজেলায় মোট জনবল চাহিদা ২০৬ জনএর বিপরীতে রয়েছে ১৩৯ জন আর জনবল সংকট রয়েছে ৬৭ জনের। গজারিয়া উপজেলায় মোট জনবল চাহিদা ১৫৭ জন এর বিপরীতে রয়েছে ১১৮ জন আর জনবলসংকট রয়েছে ৩৯ জনের। শ্রীনগর উপজেলায় মোট জনবল চাহিদা ১৯৭ জন এর বিপরীতে রয়েছে ১৩০ জন আর জনবল সংকট রয়েছে ৬৭ জনের। লৌহজং উপজেলায়মোট জনবল চাহিদা ১৭৪ জন এর বিপরীতে রয়েছে ১০৩ জন আর জনবল সংকট রয়েছে ৭১জনের। হাসপাতাল কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতেরয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট। লোকবল সংকটকের কারনে সেবা বঞ্চিত হয়ে সাধারন মানুষ প্রাইভেট ক্লিনিক ও বেসরকারী চিকিৎসালয়ে ঝুঁকে পড়ছে। এতে সাধারন মানুষ সু-চিকিৎসা বঞ্চিতসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল,ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারগুলোতেও নেই কোন ভালো মানের কোন চিকিৎসক। বেশীরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘদিন ধরে ফোনেরমাধ্যমে সরকারী ,বেসরকারী চিকিৎসকদের ডেকে এনে চালাচ্ছে চিকিৎসাসেবা। সরকারী হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের না পাওয়া গেলেও তাদের চেম্বারে পাওয়া যায়। তাদের চেম্বার পান- সিগারেটের দোকানের মতো ছড়িয়ে পড়েছে জেলা জুড়ে। অনিয়ম আর দূর্নীতি সেখানে নিয়ম। সংবেদনশীল এই বিষয় নিয়ে নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছে। অথচ সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের মালিকরা চিকিৎসার নামে রোগীদের নিয়ে গলাকাটা ব্যবসা করছে। তাদের নানা চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে গ্রামের গরীব মানুষ চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন।সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়,মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট ডাক্তাররা সকালে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ড রাউন্ড দিয়ে আবার বহি: বিভাগেও রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন । বহি: বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক দৈনিক গড়ে ১২০-১৫০ জন রোগী দেখে থাকেন ।এতে করে কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার সাধারন মানুষ ।হাসপাতালে আসা রোগী লিটন জানান, হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা আগের তুলনায় ভালো তবে লোকবল সংকট রয়েছে। এখানে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক এবং স্টাফ কম। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। রুমগুলোতে কোন সরকারী স্টাফ নেই । প্রতিটা রুমে রয়েছে ২-৩ জন করে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের দালাল। তারা রোগীদের চিকিৎসাপত্র অনেকটা জোর করে নিয়ে যাচ্ছে রক্ত, মল, মুত্র পরিক্ষা- নিরিক্ষার জন্য । ডাক্তারই দালালদের হাতে রোগীদের তুলে দিয়ে তার নির্ধারিত ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে পাঠায় শুধুমাত্র কমিশন পাওয়ার লোভে ।হাসপাতালে ভর্তি রোগী তোফাজ্জল জানান,হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভালো পাচ্ছি তবে এখানে নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব রয়েছে। সন্ত্রাসী, নেশাগ্রস্থ লোক ওয়ার্ডে ডুকে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকি দেয় । রয়েছে বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের নিয়োজিত দালালদের উৎপাত। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ওয়ার্ডের ভিতর রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা চুরি হচ্ছেপ্রতিনিয়ত।সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন,হাসপাতাগুলোতে ডাক্তার সংকট নেই। উপজেলা থেকে চিকিৎসকদের এনে জেনারেল হাসপাতালের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। জেলায় ৩য় এবং ৪র্থ শ্রেনীর জনবলসংকট রয়েছে। দালালদের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতলটি দালালমুক্ত করতেসকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনক্রমে হাসপাতালে দালাল প্রবেশ করতেদেয়া হবেনা। ডাক্তার সংকট কেটে যাবে সে লক্ষেও কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া বাকী যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।#