জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সংগঠনটির
চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের নেতাকর্মীরা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভেঙ্গে দেবেন।
এম.রফিকুল ইসলাম (চট্টগ্রাম ব্যুরো) : নগরীতে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াত ইসলামী নিয়ন্ত্রিত ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। নগরীর চকবাজার প্যারেড কর্নারে অবস্থিত ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অর্পিত সম্পত্তি জমির ইজারার মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি আরও দুই বছরের ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আর চুক্তি নবায়ন করেনি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসন ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে এ জমির ইজারা দেওয়ার পর প্রতি দুই বছর অন্তর তারা চুক্তি নবায়ন করে আসছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি আরও দুই বছরের ইজারার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলে জেলা প্রশাসন চুক্তি আর নবায়ন করেনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিলের কাছে গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ মামলার ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি এম এ তাহেরের কাছে জমির ইজারা নবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
গেল রোববার ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা ওই জমি থেকে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদের ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল জেলা প্রশাসনকে। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে দুই কলেজের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের জমির ইজারার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও জেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গোপনে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জামায়াতের নেতারা এ প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছে। তাই আমরা যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তাফসির মাহফিলের আয়োজক এ প্রতিষ্ঠানটি উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছি।’
ছাত্রলীগের ৭ দিনের আল্টিমেটাম শেষ হচ্ছে আজ রোববার। কিন্তু জেলা প্রশাসন এ নিয়ে নির্বিকার।
ছাত্রলীগের আল্টিমেটামের ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল গতকাল বলেন, ‘তারা তো লিখিতভাবে এ নিয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। রাস্তায় বিক্ষোভ করে আল্টিমেটাম দিলে তো হবে না। অফিসিয়ালি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। এরপর আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব ।
কিন্তু নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি গতকাল জানিয়েছেন, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় উচ্ছেদের ব্যাপারে গত বছর নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে দুই দফা লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল ছাত্রলীগের এ লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কর্মকর্তারা কার্যালয়ের তালা খুলতে দৌড়ঝাঁপ করছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে চকবাজার এলাকার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম হায়দার মিন্টুর সাথে সাক্ষাত করেছেন তারা। ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কর্মকর্তাদের সামনে রেখে গোলাম হায়দার মিন্টু গতকাল সন্ধ্যায় ফোনে বলেন, ‘তারা তো আমার সামনে বসা। মেয়র সাহেব (আ জ ম নাছির) তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে মেয়র সাহেব আমাকে ফোন করে বলেছেন, ‘ইসলামী সমাজ কল্যাণ কার্যালয়ের ব্যাপারে দেখে শুনে একটা ব্যবস্থা নেন।
তো আপনি তাদের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন-জানতে চাইলে গোলাম হায়দার মিন্টু জবাব দিলেন-‘সরকার তো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেনি। আমাদের নেতাদের অনেকেই তো জামায়াতের সাথে আত্মীয়তা আছে, এমনকি তাদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যও করছে। তাদেরকে বগলের তলে নিয়ে চলছে। তারা (ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ) গিলটি (দোষী) না হলে খামাকা বাধা দিয়ে লাভ কী ।
জানতে চাইলে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি এম এ তাহের গতকাল বলেন, ‘আমাদের এটা একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এর সাথে জামাতের কোনো সম্পর্ক নেই।’
নগর ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন উচ্ছেদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে সংগঠনটির চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের নেতাকর্মীরা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভেঙ্গে দেবেন।