মিয়ানমারে থেমে থেমে সংঘর্ষ, নিহতের সংখ্যা বাড়ছে
মিয়ানমারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের কথিত হামলা এবং এর পাল্টা জবাব হিসেবে সরকারি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৯-এ দাঁড়িয়েছে।
হামলা-পাল্টা হামলার এ ঘটনায় পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য এবং ৭৭ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর ভাষ্যমতে, ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভ্যাশন আর্মি (আরসা)’ নামে মুসলিম রোহিঙ্গা জঙ্গিদের একটি বিশাল দল বৃহস্পতিবার ভোররাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে পরিকল্পিত হামলা চালায়।
এনডিটিভি জানায়, হামলাকারী ওই দলে ছিল দেড়শ’র বেশি মানুষ। বন্দুক, চাপাতি ও ঘরে তৈরি গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালানো কথিত শতাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গির সঙ্গে পুলিশ লড়াই করেছে বলে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের ছবিও অনলাইনে প্রকাশ করে সরকার।
হামলার জবাবে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চি শুক্রবারই এক বিবৃতির মাধ্যমে জানান, সামরিক বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী পুলিশ রাখাইনদের ওই হামলার জবাবে বিদ্রোহীদের নির্মূল করার জন্য ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ শুরু করেছে।
রাখাইন রাজ্যের মংদাও এলাকা থেকে এম্মার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী ফোনের মাধ্যমে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে তাদের গ্রামে হঠাৎ করেই ঢুকে ঘরবাড়িতে আগুন দিতে থাকে এবং প্রথমেই গুলি করে কমপক্ষে ১০ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
ওই সময় আতঙ্কে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যেতে থাকে বলে জানান এম্মার। তবে বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি এলাকার দিকে পালিয়ে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর থেকে ওই গ্রামের ভেতর গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে।
এখনো বেশ কিছু এলাকায় রোহিঙ্গা-নিরাপত্তা বাহিনী সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
আরসা শুক্রবার ভোরের দিকেই হামলার দায় স্বীকার করে টুইটারে একটি বিবৃতি দেয় এবং জানায়, সরকারি বাহিনীর অত্যাচার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটবে বলেও টুইটবার্তায় হুমকি দেয়া হয়।
হামলাকারী রোহিঙ্গাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে পাল্টা হামলা না চালাতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, সরকারের এমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয় যার ফলে চলমান সঙ্কট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরেও মিয়ানমারে এ ধরণের একটি হামরায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণসহ ব্যাপক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় কমপক্ষে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর কয়েকশ’ রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে।