রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা শুরু করেছে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ রাখাইনরা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ৩০টি পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন করে তৎপর হওয়ার পাশাপাশি কোনো কোনো স্থানে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা শুরু করেছে বলে খবর আসছে। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ চৌকিতে 'রোহিঙ্গাদের' হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কমপক্ষে ৮৯ জন নিহত হন। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির দপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১২ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য অপর ৭৭ জনকে জঙ্গি বলে দাবি করা হয়েছে।
হামলার নিন্দা জানিয়ে সু চি বলেছেন, সহিংসতার মাধ্যমে রাখাইনের শান্তি-সংহতি নষ্ট হতে দেয়া হবে না।
এদিকে, ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আরো হামলার হুমকি দিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি।
রাখাইনের মংডু, রাথিডং ও বুথিদাউংয়ে সেনা সমাবেশ নিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরেই সেখানকার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছিল। বিদ্রোহ দমনের নামে সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। সর্বশেষ সহিংসতার পর নির্মূল অভিযান শুরু করলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায়।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচির দপ্তর শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, মংডু ও বুথিদাউং এলাকার বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দেড়শো রোহিঙ্গা আক্রমণকারী একটি সেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তা প্রতিরোধে পাল্টা আক্রমণ চালায়। রোহিঙ্গা গেরিলাদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশ পোস্টগুলিতে সমন্বিত হামলা চালায়।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি এক টুইটবার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে।
তারা জানিয়েছে, বার্মিজ নির্যাতনকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ২৫টিরও বেশী জায়গায় প্রতিরোধ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। শিগগির আরো হামলা চালানো হবে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বিকেলে নেপিডোতে প্রতিরক্ষা, সীমান্ত স্বরাষ্ট্রসহ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে সু চি বলেন, কফি আনান কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে হামলা যুগপৎভাবে মিলে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সরকার সজাগ রয়েছে। এজন্য মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, রাখাইনে সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেন, এ রকম নিষ্ঠুর ও কাণ্ডজ্ঞানহীন হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার পেছনে কোনো কারণ থাকতে পারে না। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের তিনি বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে কফি আনান রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন।
গত বছরের অক্টোবরে এ ধরনের এক হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর বড় ধরনের দমন অভিযানে নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া এবং ধর্ষণের মতো অভিযোগ ওঠে। অভিযানের মুখে প্রায় ৮৭ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।