রাখাইনে সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানালো জাতিসংঘ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা-বাহিনী ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে ৯০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাখাইনে শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এলাকাটিতে নতুন করে যাতে কোনো সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার মিয়ানমার সরকার রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারীর মৃত্যুর খবর জানালেও; স্থানীয় হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
রাজ্যটিতে পুলিশ পোস্টে হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহতের খবর প্রকাশের পর, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় নতুন করে দমন-পীড়নের আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। গত বছর অক্টোবরেও একইভাবে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্মূলের অভিযানে নামে সেদেশের সেনাবাহিনী।
শুক্রবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর বিষয়ে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে আরাকান ন্যাশনাল পার্টির একজন আইনপ্রণেতা। কিন্তু অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে মত দেয়ায় প্রস্তাবটি পাস হয়নি। এ অবস্থায় রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি আলোচনায় জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক ডাকার পরামর্শ দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা থং আয়ে। তবে নিম্নক্ষের স্পিকার উ উইন মিন্ত জানান, কেবল প্রেসিডেন্টেরই এই বৈঠক ডাকার এখতিয়ার রয়েছে।
এর মধ্যেই রাখাইন বিষয়ক পরামর্শক কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতসহ, বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। এ লক্ষ্যে মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় বলেও এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন সুচি।
এদিকে, রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংঘাত বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া না হলে, সেখানে আবারও বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘ মুখপাত্র আলেসান্দ্রা ভেলুসি বলেন, রাখাইনে সহিংসতায় বহু মানুষ হতাহতের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের উচিত আলোচনার উদ্যোগ নেয়া। যে কোনো পরিস্থিতিতে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও তাদের জীবন রক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
রাখাইনে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে যাতে বেসামরিক লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে মিয়ানমার সরকারের লক্ষ্য রাখা উচিত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজ্যটিতে মানবাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব পক্ষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদর নুয়ার্ট।