কর্ম-উদ্যোগী যুব সমাজের জন্য উদ্যোক্তা তৈরির শিক্ষা
দেশের প্রধানমন্ত্রী ও দেশরত্ন শেখ হাসিনা যুব সমাজের কর্ম উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোক্তা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন। তার অনুশাসন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও তা মূলত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে বেশি সীমাবদ্ধ। অবশ্য এদেশে সাধারণ মানুষের কাছে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা এখন পর্যন্ত সম্মানীয় পেশা হয়ে উঠতে পারেনি।
ছেলেবেলায় পরীক্ষায় Dignity of labour (ডিগনিটি অব লেবার)-এর ওপর রচনা লিখতে হতো। আজ প্রায় চল্লিশ বছর হয়ে গেল সমাজে কিন্তু শ্রম ও শ্রমিকের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। এর মূল কারণ সামাজিক ট্যাবু। এ ট্যাবু কাটিয়ে উঠতে পারলেই আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় বর্তমান সরকার যে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন তা সার্থকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
যদিও গত সাড়ে আট বছরে বেশকিছু প্রকল্প বিশ্ব ব্যাংক- হেকাপ আর ইউজিসির কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের মাধ্যমে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করা হয়েছে- তার মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে ইনস্টিটিউট শানাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল অন্যতম। সরকারি-বেসরকারি মিলে এ মুহূর্তে প্রায় আশিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইকিউএসি(IQC) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সঙ্গে একটি আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে- প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদৌ আইকিউসি প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে কিনা সেটি প্রশ্ন থেকে যায়। এ ব্যাপারে সরকারের অনুশাসন দরকার। পাশাপাশি যে সমস্ত সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইকিউসির আওতায় আসেনি তারা আধুনিক কর্ম উপযোগী পরিবেশের অবস্থান কিভাবে জানতে পারবে। কেননা আইকিউসির আওতায় সুযোগ হয়েছে।
একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে স্বউদ্যোগে বিভিন্ন স্টেইক হোল্ডারদের কাছ থেকে জরিপের মাধ্যমে বেশকিছু ফলপ্রসূ জ্ঞান অর্জন করা যায় আধুনিক শ্রেণী কক্ষ ব্যবস্থাপনা আবার পরীক্ষা পদ্ধতি যথাযথ করা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন আনা, ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও বেশি করে বাস্তবতার আলোকে জ্ঞানের শিখা বিতরণ করা চাকরির বাজার তৈরি করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তর্জাতিকীকরণ করা ও সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের তত্ত্বাবধানে ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান এবং কোয়ালিটি এস্যুরেন্সের বর্তমান প্রধান প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী প্রকল্পটির কার্যক্রম সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার ধারণা ছিল, যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের করতে চাচ্ছেন সেহেতু এ প্রকল্পটি আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি পর্যন্ত বর্ধিত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
অবশ্য সরকার আরও একটি ভালো কাজ করছেন- আর তা হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মান উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অধিভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কয়েক গুণ বড় তবে পড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মান নিয়ে পত্র-পত্রিকায় নানা রিপোর্ট নিয়মিতভাবে বের হচ্ছে। তবে সরকার প্রধান আরেকটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার। এটি একটি উত্তম উদ্যোগ। তবে আশা করব এ কলেজগুলোতে যেহেতু প্রায় দু’লাখ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে অধিকতর নিবিড় পরিচর্যার জন্য এগুলো ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নিয়ে বর্তমান সরকার নানামুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আবার ইউজিসি-শিক্ষার মান উন্নয়নে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং-২০২৬ পর্যন্ত তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। এ প্ল্যানিং যারা আইকিউসির কার্যক্রম বিদেশ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখনও বিভিন্ন পর্যায়ে ন্যাশনাল এ্যাসেসার হিসেবে কাজ করছে তাদের অন্তর্ভুক্তিটির বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার।
ব্যক্তিগত উদাহরণ দিচ্ছি- যখন আইকিউসির পরিচালক হিসেবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হলো- প্রথমে ভাবলাম যেখানে অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করে চলেছি- এটি আরেক বাড়তি ঝামেলা। কিন্তু যখন এআইটি এক্সেটেনশনে ১৮ দিনের প্রশিক্ষণ নিলাম, এবং তারা প্রশিক্ষণের সময় বললেন, তোমরা তোমাদের ১৮ দিন আমাদের দাও, আমরা তোমাদের ভাবনা চিন্তায় আমূল পরিবর্তন এনে দেব। দেশে এসে ভাবলাম সত্যিই এখন কিছু করে দেখানোর সুযোগ এসেছে। আমি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান এম. সবুর খানকে দেখেছি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গলের জন্য আইকিউসির কার্যক্রমে উৎসাহ যুগিয়েছেন। আমার সে সময়ের কলিগরা যেভাবে সমর্থন দিয়ে কোর্স কারিকুলাম ডিজাইনে সহায়তা করেছেন, নির্দেশিত নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেয়া, রিসার্চ মেথোডোলজির ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়েল বের করা, নিয়মিতভাবে আইকিউসির কার্যক্রম নিয়ে নিউজ লেটার বের করার ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। ইউজিসির কোয়ালিটি এস্যুরেন্স ইউনিটের আওতায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশে ন্যাশনাল এ্যাসেসার যথাযথভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। এ কাজটি যে কত উত্তমভাবে করা যায়-তা ইউজিসির কিইউএসি- প্রমাণ করেছেন।
তাই তো এখন সময় পেলেই বিভিন্ন দেশের ন্যাশনাল এডুকেশন ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা করছি-যত দেখছি তত বিস্মিত হচ্ছি। আমাদের দেশেও অনেক প্রথা থাকলেও সেগুলো সুশৃঙ্খলিত নয়। এমনকি প্রপারলি ডকুমেন্টেড নয়। আরেকটি সমস্যা যে আইকিউসি প্রকল্পের আগে দু’একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যরা বিশেষত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাথা ঘামাত না। কিন্তু এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যরাও কার্যক্রম শুরু করেছে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি আবার বিদেশি এ্যাক্রেডিশন নিচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে আইকিউসির মাধ্যমে প্রয়াস নিচ্ছে।
২০১৯-এ প্রকল্প সমাধা হলে আইকিউসি কিভাবে চলবে- সে সম্পর্কে এখন থেকেই একটি প্রস্তুতি নেয়া দরকার। নচেৎ সরকারের এ শুভ উদ্যোগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে- আর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে না বুঝে গবেষণা করেছে বলে পত্রিকান্তরে রিপোর্ট বেরিয়েছে তা যেন সত্য না হয়। কেননা সরকারপ্রধান বড় আশা নিয়ে দেশে একটি এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিলের বিল জাতীয় সংসদে পাস করেছেন। যারা সুদীর্ঘকাল ধরে বর্তমান সরকারের নীতির সঙ্গে একমত পোষণ করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন তারা যেন এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিল হলে কাজ করে দেশকে এবং আগামী প্রজন্মকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে। এসডিজি-৪ এবং ৮ এর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের হাতে বিকল্পও নেই। সরকার প্রধানের কাছে আবেদন থাকবে- বিমস্টেকের কার্যপরিধিতে শিক্ষার মান উন্নতকরণ এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে এদেশে একটি বিমস্টেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা এবং জেসিআই সনদপ্রাপ্ত উন্নতমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়া। সার্কভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে শিক্ষা-চিকিৎসা ও শুল্ক কাঠামো এবং গবেষণার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ আছে তা কিন্তু বিমস্টেকের আওতায় নেই। আর তাই বিমস্টেকে ঢেলে সাজানো দরকার এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন করা দরকার।
যারা শিক্ষক তারা যেন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেন, মিথ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। সরকার শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ফরিদউদ্দীন আহমেদকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করে একটি ভালো কাজ করেছেন। এদিকে প্রফেসর মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত সংস্কার সাধনের কাজ কেরানীগঞ্জ এলাকায় হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দর-দক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নিয়ে মামলাধীন বিষয় হওয়ায় কিছু না বলাই ভালো। তবে বর্তমান উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য রশিদ আল আসকারীও সুন্দরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে গবেষণা বাড়ছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স ডিগ্রী চালু করা দরকার। তবে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বেনিয়ম হচ্ছে সে সম্পর্কে ইউজিসি সতর্ক করেছে। এ ৪৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করার পর চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি ছাপিয়েছেন তা সত্যি নিন্দনীয়। এদিকে সরকারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পরস্পরের কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ না হওয়ায় সরেজমিন আমি পরিদর্শন করে রীতিমতো হতভম্ব। রেজিস্ট্রার যেভাবে ছুড়ি ঘোরান সেভাবেই রাবার স্ট্যাম্প উপাচার্য চলছেন। অবশ্য কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা শিক্ষকদের ঠকান তারা নির্ভর করেন দুর্নীতিপরায়ন শিক্ষক -কর্মকর্তাদের ওপর। এদের কারণে পাওনা টাকার জন্য উকিল নোটিশ দিলেও ন্যায্য টাকা দেয়া দূরে থাক মিথ্যে প্রবঞ্চনা করে বলেন যে, আমরা নতুন ব্যবস্থাপনায় এসেছি। অথচ শিক্ষক ঠকানোর জন্য প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নেই।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওনা টাকা আদায় এবং মিথ্যে অভিযোগ তৈরির জন্য দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ে যিনি আমার পরমাধ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ‘অন্যায়ের সঙ্গে আপোস নয়’। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম, প্রাক্তন উপাচার্যের প্রাপ্য অর্থ না দেয়ার বিষয়টি সমাধানের বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সুশীল সমাজের সদস্য হয়ে প্রত্যেকের উচিত আয়নায় নিজের মুখ দেখা। টাঙ্গাইলে মূল ক্যাম্পাস হলে ঢাকায় কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালায় তা দেখার বিষয়। কূটনৈতিকপাড়ায় এটি চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসকৃত ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান যুগোপযোগী শিক্ষা পরিবেশ অনুযায়ী outcome based teaching learning চালু হচ্ছে। ব্লমস টেক্সনোমী প্রবর্তনের পাশাপাশি এ্যাসেসমেন্ট ফ্রসেসও ঠিক করা দরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁস যেহেতু জাতীয় সমস্যা এ ব্যাপারে সামাজিক সংস্কার দরকার। হাতেগোনা যে কয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ আছে সেগুলো বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সরকার যতই চেষ্টা করুক যতক্ষণ না ভেতর থেকে সবাই সচেতন হবে ততক্ষণ এটি বন্ধ করা যাবে বলে মনে হয় না। অথচ বিএনপি-জামায়াত আমলে প্রতিহিংসার কারণে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’। সেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেখান পড়েও এমবিএ-এর সার্টিফিকেট পাইনি আর মাস্টার্স ইন কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে কেবল প্রভিশনাল সার্টিফিকেট পেয়েছি।
আমাদের সঙ্গে যারা পড়েছে তারা বিএনপি-জামায়াতের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার। সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ থাকবে- যারা এমবিএ-এমসিএ-বিবিএ ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ বেসরকারিতে পড়েছিল তাদের মূল সনদ দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ যেভাবে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা করছে তা প্রশংসনীয় তবে কেউ কেউ আবার লোভাতুরভাবে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। প্রজন্ম ’৭১-এর সকল সদস্য সদস্যাকে ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্দ্ধে উঠে কাজ করতে হবে। এমন যেন না হয়- এক মণ দুধের মধ্যে কয় ফোঁটা চনাই নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা এক পত্রিকার হিসাবে দেখা যায় বারো হাজার- এরা যেন বর্তমান সরকারের প্রতি মুনাফেকের আচরণ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। কেননা তলে তলে এরা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে- বর্তমান সরকারের সাধু উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে চলেছে। আরেকটি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ এবং কিছু সুশীল মহিলা নেত্রীসহ করে চলেছে। এদিকে দীর্ঘ গবেষণায় দেখেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরির যে সমস্ত উদ্যোগ নিতে বলেছেন তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্সটিটিউট ইনস্টিটিউট হিসেবে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের নেতৃত্বে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট চালু করেছেন। ইতোমধ্যে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপাতত, মাস্টার্স ইন এন্ট্রিপ্রিনিউরিয়াল ইকোনমিক্স চালুর অনুমতি চেয়েছে।
আর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ব্যাচালর ইন এন্ট্রিপ্রিনিউরিয়াল ইকোনমিক্স চালুর অনুমতি চাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়ে অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের কথা ভেবে এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে ‘চাকরি করব না, চাকরি দেব;, কিংবা ‘চাকরি করলে উদ্যোমী ও উদ্যোগী হয়ে উঠব’ তা বাস্তবায়নে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স সবসময়েই ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের নেতৃত্বে কাজ করে চলেছে। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের সঙ্গে বিশ্ব ভারতীয় mou সাইন হতে যাচ্ছে। মনে পড়ে আমি যখন থাইল্যান্ডের নারিসায়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশে উদ্যোক্তা ব্যবস্থাপনার কার্যকরণ’ সম্পর্কে পোস্ট ডক্টরেট করার গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দেই, তখন আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- তুমি কি কারণে এ বিষয়ে পোস্ট ডক্টরেট করতে চাচ্ছ? আমার সোজাসাপ্টা প্রশ্নের উত্তর ছিল, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী চান উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্ম উপযোগী প্রবৃদ্ধি সহায়ক উন্নয়ন হোক। ভদ্রমহিলা বললেন, তুমি কি মনে করো, তোমার দেশে উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে সহায়তা পাবে? আমি গবেষণার প্রস্তাবনা জমা দিয়ে এসে দেশে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট লেভেলে প্রোগ্রামটির কোঅর্ডিনেশনের দায়িত্ব নেই। একজন প্রবীণ অধ্যাপক বিএনপি ঘরানার পলিটিক্স আর গণ্ডগোল লাগিয়ে দিল। তবে এখন ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমটি সাফল্যের সঙ্গে করতে পারছি। আশা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনক্রমে মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং পরে ব্যাচেলর প্রোগ্রাম ইন এন্ট্রিপ্রিনিউরাল ইকোনমিক্স পর্যায়ক্রমে চালু হলে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বাস্তবায়িত হবে।
সরকার চান- দেশের মানুষের আয় প্রবাহ বাড়ুক, সঞ্চয়-বিনিয়োগে ভারসাম্য সৃষ্টি হবে এবং ধনী-দারিদ্র্যের বৈষম্য দূরীভূত হবে। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের আদলে। এ প্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রীর অনুমতি অর্থনীতির নানা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হলে অবশ্যই দেশে দক্ষ অর্থনীতিবিদের যে অভাব আছে তা দূরীভূত হবে। এখানে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য পিকেএসএসের সহায়তায় ফিল্ড ট্রিপ, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ আর ব্যবসায়ী-শিল্প উদ্যোক্তা-কৃষি উদ্যোক্তা ব্যাংকারদের বক্তৃতা বিপণন-ব্যবস্থপনা কৌশল গেস্ট হিসেবে স্পেশাল টক দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার মান উন্নত রাখার ক্ষেত্রে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স আপোসহীন। দীর্ঘ প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান সরকার প্রধান স্বয়ং এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় উদ্যোক্তা তৈরি করা দরকার। হয়ত অনেকে বলবেন বিল গেটস হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোননি, ডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু যুগ পাল্টেছে। উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে উপযুক্ত শিক্ষা-প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। দেশে অবশ্য বর্তমানে আইএলও থেকে মাস্টার ট্রেনার তৈরি করা কাফম্যান প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা তৈরির কার্যক্রম, ওয়ানিদা ফাউন্ডেশন আবার উদ্যোক্তা তৈরির মডিউল নিয়ে এসেছে। উদ্যোক্তা তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন সর্বাগ্রে দেশের প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করেছিলেন। এক্ষণে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন ছোট উদ্যোক্তা তৈরির জন্য অর্থায়ন করতে পারে। এটি বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা যে সে স্থান থেকে স্ট্রেটেজিক লিডার হিসেবে কাজ করছে তাদের পালন করতে হবে। দেশে প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেই। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার বিভিন্নভাবে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও কর্ম উপযোগী শিক্ষা পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস হিসেবে উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স দায়িত্ব পালন করতে পারে। বিদেশে দেখেছি স্কুল পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরির পাঠ্যক্রম থাকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও পাঠ্যক্রম এবং প্রোগ্রাম থাকে।