কালীগঞ্জে অস্ত্রসহ পাঁচ অপহরণকারী আটক-যুবক উদ্ধার
মোঃ লোকমান হোসেন পনির, কালীগঞ্জ (গাজীপুর): গত বুধবার রাতে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে অস্ত্রসহ পাঁচ অপহরণকারীকে আটক করেছে । এসময় অপহরণকারীদের নিকট থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগজিন, গুলি, চাপাতি, ছুরি, মোবাইল ফোন, মুখোশ, নগদ টাকাসহ অপহৃত যুবককে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, একমাস পূর্বে নর্দান ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মোছাঃ তাসলিমা সাবরিন মোহনা নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রুপসি গ্রামের আলী আকবরের পুত্র রিফাতের (১৯) সাথে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ২৭ আগষ্ট মোহনা তার সাথে দেখা করার জন্য রিফাতকে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে আসতে বলে। প্রেমের টানে রিফাত বিকালে নির্ধারিত স্থানে পৌছলে পূর্ব থেকে একটি সাদা রংয়ের এক্স করোলা প্রাইভেটকার নিয়ে অপেক্ষমান মোহনা তাকে গাড়ীতে তুলে নেয়। আলাপচারীতার এক পর্যায়ে মোহনা গাড়ীতে থাকা জুসে সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে রিফাতকে খেতে দিলে সে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। এসময় মোহনা গাড়ী নিয়ে নির্জন স্থানে পৌছে অপহরণকারী চক্রের অপর দুই সদস্য মোহা¤মদ আলী ও তুহিনকে গাড়ীতে তোলে নেয়। তারা গাড়ীতে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিফাতের চোখ ও দুই হাত স্কচটেপ দিয়ে আটকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রিফাতকে রাতে অজ্ঞাত একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে ও ইফরান আলী এবং নাইম নামে দুই যুবককে পাহারায় রাখে। ২৮ আগষ্ট দুপুরে রিফাতের জ্ঞান ফিরলে তার মোবাইল দিয়ে পিতা-মাতা ও মামার ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না করলে রিফাতকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দেয়।
র্যাব জানায়, অপহরণ অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) এর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুস ছালাম সঙ্গীয় ফোর্স এসআই মোঃ ইমানুল ইসলাম ইমন, এম এম নজরুল ইসলাম, পিসি মোঃ আব্দুল হামিদ, কনষ্টেবল মোঃ সলিমুল্লাহ ও সিপাহী মোছাঃ শেফালি খাতুনকে নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে গত ২৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী থেকে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মোহা¤মদ আলী (২২)কে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী পানজোরা গ্রামের তুহিনের পরিত্যাক্ত বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে নাইম (২০), ইফরান আলী রাজ আকাশ (২৩), তুহিন (২৪) ও সুমন (২৩) কে আটক করে ও তাদের হেফাজত থেকে অপহৃত রিফাতকে উদ্ধার করে। এ সময় আটককৃতদের কাছ থেকে আমেরিকার তৈরী একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের গুলি, একটি ষ্টীলের চাপাতি, একটি বাটযুক্ত ছুরা, চারটি মোবাইল ফোন, একটি মুখোশ ও নগদ ৬৩৩ টাকা উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃদের দেয়া তথ্যে রাতে দক্ষিণখানের আইনুসবাগের বাসা থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মোছাঃ তাসলিমা সাবরিন মোহনাকে আটক করা হয়। ৩০ আগষ্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় র্যাব-১ গ্রেফতারকৃতদের সহ অপহৃত রিফাতকে কালীগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে।
র্যাব আরো জানায়, এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের নারী সদস্য ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে প্রেম ও বন্ধত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করে কৌশলে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে রিফাতের মামা জুম্মান মিয়া বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি ও র্যাব বাদী হয়ে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন (সংশোধনী ২০০২) এর ১৯-ক/১৯(চ) ধারায় অপর একটি মামলা দায়ের করে, যার নং ২৪(৮)১৭ এবং ২৫(৮)১৭।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলম চাঁদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অপহরণকারীদের বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অপহরণকারী মোহাম্মদ আলী ও নাইম নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার বাগবেড় গ্রামের মোঃ দেওয়ান আলীর এবং আশেক ওরফে এশেক আলীর পুত্র, ইফরান আলী রাজ আকাশ ও সুমন কালীগঞ্জের পানজোরা গ্রামের ইমরান আলী রাজের এবং আফাজউদ্দিন মেম্বারের পুত্র, সুমন মাদারীপুর জেলার সদর থানার চর গোবিন্দপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র, মোছাঃ তাসলিমা সাবরিন মোহনা নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার বন্যাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বাতেনের কন্যা।