তেল ভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন
নতুন করে আরো প্রায় ১৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১০টি তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছে সরকার। বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ তরল জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ার পরও নতুন করে তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগকে সরকারের গৃহীত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলছেন, বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না আসায় ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে।
চলতি বছরের গ্রীষ্মের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের পুনরাবৃত্তি যেন আগামী বছরেও না ঘটে, সেজন্য বেসরকারি উদ্যোগে ১ হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডিজেল ও ফার্নেল অয়েলভিত্তিক আরো ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উৎপাদন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নতুন অনুমোদন পাওয়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র:
> কেরানীগঞ্জ ৩০০ মেগাওয়াট
> কেরানীগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট
> যশোর ১০০ মেগাওয়াট
> কুমিল্লা ২০০ মেগাওয়াট
নতুন অনুমোদন পাওয়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র:
> চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট
> বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট
> চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট
> ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৫০ মেগাওয়াট
> খুলনা ১০৫ মেগাওয়াট
> গাজীপুর ৩০০ মেগাওয়াট
পাওয়ার সেল মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘নয় মাসের মধ্যে যদি নতুন জেনারেশন আনতে পারে তাহলে আগামী গ্রীষ্মের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের এর সমস্যা সমাধান হবে।’
সরকারের বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী, উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসার কথা।
জ্বালানিভেদে বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন মূল্য
> ডিজেল ২৬.৫৭ টাকা
> ফার্নেল অয়েল ১১.৬৭ টাকা
> ফার্নেল অয়েল ১০.০০ টাকা
> কয়লা ৮.৯৩ টাকা
> ভারত থেকে আমদানি ৫.০৪ টাকা
> গ্যাস ৩.৩৮ টাকা
> গ্যাস ২.২৪ টাকা
> জলবিদ্যুৎ ১.১১ টাকা
২০২১ সালের মধ্যে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসছে ডিজেল ও ফার্নেল অয়েল থেকে। তাই নতুন করে আবারো তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সরকারের গৃহীত নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘৫ বছরের পরিকল্পনা, পিএসপি পরিকল্পনাসহ কোনোটার সাথে তার তেলভিক্তিক বিদ্যুতের বৃদ্ধি তা সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সরকার এখন যেটা করছে সেটি তারা বাধ্য হয়ে করছে। কারণ অন্য জায়গায় তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
তবে পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কয়লাভিত্তিক বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাসময়ে স্থাপন করতে না পারায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হচ্ছে বলে জানান জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাকে যেভাবেই হোক বিদ্যুৎ আনতে হবে। আর ক্ষণিকের জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
তেলের ওপর অধিক নির্ভরশীলতা বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় আরেক দফা বাড়াতে পারে, বিশেষজ্ঞরা এমন আশংকা করলেও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে আসায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না।