প্রায় বন্ধের পথে গাজীপুরের সিনেমা হলগুলো
মো.রবিউল ইসলাম ওমো. আবু ছালেহ মুছা বাবু, টঙ্গী (গাজীপুর):
এক সময় সিনেমা পাগল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল সিনেমা হল গুলোতে। এখন দর্শক না থাকায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওইসব সিনেমা হল। এতে হতাশায় দিন গুনছেন সিনেমা হল মালিকরা। জেলা তথ্য অফিস ও সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে ১৮ থেকে ১৯টি সিনেমা হল ছিল। এগুলো হলো চম্পাকলি, আনারকলি, চান্দনা, ঝুমুর, নন্দিতা, উল্কা, বর্ষা, বর্ষণ, এরিণ, মোহনা, সাগর, নাদিয়া, শাপলা, চিত্রপুরী ও মনোরম।
গত কয়েক বছরে এই সিনেমা হলগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। ঘরে ঘরে টেলিভিশন ডিস ও ইন্টারনেটের কারণে মানুষ এখন ঘরে বসেই সিনেমা দেখে। ফলে সিনেমা হলের দিকে আগ্রহ নেই মানুষের। গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা মো. রবিউল ইসলাম জানান, এক সময় কাজের ফাঁকে প্রায় প্রতিদিন টঙ্গীর আনারকলি, চম্পাকলি ও গাজীপুরের বর্ষা, উল্কা ও ঝুমুর সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখতাম। সিনেমা হলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। বাসায় বসে ডিস লাইন ও ইন্টারনেটে সব ধরণের ছবি দেখতে পাই। এখন সিনেমা হলে চলে অশ্লীল ছবি। এছাড়া সিনেমা হলের সামনে অশ্লীল পোস্টার লাগানো থাকে। যার কারণে পরিবারের লোকজন নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়া যায় না। ফলে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
টঙ্গীর আরেক বাসিন্দা হানিফ মিয়া জানান, বাংলাদেশের সিনেমাগুলোর কাহিনী এখন ভাল লাগে না। বাংলাদেশের ছবির চেয়ে ভারতের ছবিগুলো অনেক ভাল লাগে। এছাড়া আমাদের দেশের সিনেমা হলের পর্দাও অনেক খারাপ, পরিষ্কার ছবি দেখা যায় না। আগে সিনেমা হলের ছবি দেখতে লাইন ধরে টিকিট কাটতে হতো। এখন ডেকেও সিনেমা হলে দর্শক পাওয়া যায় না। সিনেমা হলের অবস্থান আগের জায়গায় নিতে হলে সিনেমা হলের পরিবেশ ভাল করতে হবে, ভাল মানের ছবি, হলের পর্দা উন্নত থাকলে হয়তো দর্শক আবার সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখবে।
টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হলের কর্মকর্তা জানান, এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন থাকায় মানুষ সিনেমা হলে আসে না। ঘরে বসেই মানুষ এখন সকল ছবি দেখে। এছাড়া সিনেমা হলে ছবি চলার আগেই তা টেলিভিশন, ডিশ ও ইন্টারনেটে দেখতে পাওয়া যায়। যার ফলে মানুষ এখন সিনেমা হলে আসে না। এছাড়া ছবির মানও তেমন ভাল হয় না। দর্শক না থাকায় সিনেমা হল মালিকরা এখন হতাশার মধ্যে রয়েছে। সিনেমা হল চালিয়ে স্টাফদের বেতন দেওয়া যায় না। লোকসানে রয়েছে সিনেমা হল মালিকরা।
গাজীপুর জেলা তথ্য অফিসার রাহাত হাসনাত জানান, গাজীপুরে ১৮থেকে ১৯টি সিনেমা হল এক সময় ছিল। পরবর্তীতে গত সপ্তায় সিনামা হল নিয়ে কাজ শুরু করছি। জেলা প্রসাশন থেকে অনুমতি নেওয়া লাগে সিনামা হলের । তাদের কাছ থেকে একটি তালিকা নিয়েছি। সেই তালিকায় এখন ১৪টি সিনামা হল। ১৪টির মধ্যে ৪ থেকে ৫টা বন্ধ। আরো ২ থেকে ৩টি বন্ধ হয়ে যাবে। সিনামা হল বন্ধ হওয়ার মূল কারন স্যাটেলাইট। সিনামা হলে যেয়ে সিনামা দেখার যে কালচার সেটা আমাদের দেশে নাই। ২০০০সাল থেকে ২০১০সালের মধ্যে অশ্লিল সিনামা চলে আসছে তখনই কালচারটা নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু অশ্লিল ছবির কারনে সিনামা হল বন্ধ হচ্ছে না। সিনামা হলের পরিবেশ কারনেই কেউ সিনামা দেখতে যায়না। সরকার সিনামা হলের জন্য কাজ করছে। সিনামা হলগুলো ডিজিটাল করা হবে।